সহসা খুলছে না বৃটিশ কাউন্সিল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ হওয়ার ৯ দিন পরও বৃটিশ কাউন্সিল খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। কবে নাগাদ খুলবে তাও বলতে পারছে না বৃটিশ কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের কয়েক লাখ শিক্ষার্থী পড়েছেন বিপাকে। সময়মতো পরীক্ষা দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সহায়তা, স্কলারশিপ, লাইব্রেরি সেবা, ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএসটিএস) পরীক্ষা গ্রহণ, ইংরেজি শেখার নানা কোর্স পরিচালনাসহ শিল্প, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে বৃটিশ সরকারের দাতব্য এ  প্রতিষ্ঠানটি। গত ২৭ জুলাই থেকে বৃটিশ কাউন্সিলের মোট চারটি (ঢাকায় দুটি, চট্টগ্রাম ও সিলেটে একটি করে) অফিস বন্ধ রয়েছে। এছাড়া, ধানমন্ডি ও উত্তরায় দুটি লার্নিং সেন্টারও বন্ধ রয়েছে। তথ্য সহায়তা ছাড়া আর সেবা দিতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিপাকে পড়েছে সেখানে সেবা নিতে আসা কয়েক হাজার মানুষ।

বৃটিশ কাউন্সিলের সার্বিক বিষয়ে হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন আর্শিয়া আজিজ বলেন, সবাই উদ্বেগে আছেন সেটি আমরাও জানি। তবে বৃটিশ কাউন্সিল বন্ধ বলে তাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন বা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে বিষয়টি সে রকম না। তিনি জানান, আমাদের চারটি মৌলিক সেবা এখনও চালু রয়েছে। সবাই এই সেবাগুলো অনলাইনে নিতে পারছেন। এছাড়াও ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল’ এবং আইইএসটিএস পরীক্ষার সব কার্যক্রম অনলাইনে হয়। আগ্রহীরা এই সেবা অনলাইনে নিতে পারছেন। কোনো সমস্যা হলে আমাদের অনলাইন সার্ভিস, কাস্টমার কেয়ার তাদের সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, আমাদের সিকিউরিটি টিম এখনও পুরো বিষয়টি রিভিউ (মূল্যায়ন) করছেন। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর বৃটিশ কাউন্সিল টিম সেটি পুনরায় মূল্যায়ন করবেন এবং যেখানে যা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার পর খোলার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সেটি কবে নাগাদ এ ব্যাপারে সঠিক কোনো তারিখ বলতে পারেননি তিনি।

গতকাল রাজধানীর ফুলার রোডের বৃটিশ কাউন্সিল অফিসে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় দেখা যায়। বনানী থেকে এসেছেন নূরাইদা। তার মা জানান, আমার মেয়ে এবার ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা দেবে। তার পরীক্ষা রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করবো তা জানার জন্য এসেছি। বৃটিশ কাউন্সিল বন্ধ হওয়ায় আমাকে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে বলছে। একই তথ্য নিতে এসেছেন আরো কয়েক জন অভিভাবক।

বৃটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরি সেবা নেন প্রায় ৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ছাত্র ফরিদুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রতিদিন ক্লাস ছাড়া বাকি সময়টুকু বৃটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করতাম। এখানে দেশি-বিদেশি প্রচুর জার্নাল আছে। যা অন্য কোথায়ও পাওয়া যায় না। এছাড়া, এখানে একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছিল। যাদের সঙ্গে আমি আলোচনা করতাম। লাইব্রেরি বন্ধ হওয়ার কারণে কারও সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। এক কথায় আমার মনে হয়, আমি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। কবে বৃটিশ কাউন্সিল খোলা হবে সেটি জানার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু গেটে দারোয়ান ছাড়া কেউ নেই। কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছি না।  গতকাল সকাল থেকে ফুলার রোডের নানা সেবা নিতে আসা প্রার্থীদের ভিড় দেখা যায়। তারা সবাই জানতে চান কবে খুলবে এই প্রতিষ্ঠানটি।

আর্শিয়া আজিজ জানান, ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী ও আইইএসটিএস পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন আগে থেকে অনলাইনে হতো, এখনও অনলাইনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করেন তার স্কুল। তারপরও যারা বৃটিশ কাউন্সিলে আসতো তাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হতো। এখনও সেই তথ্য দেয়া হচ্ছে। আগামী শনিবার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এই শঙ্কা কাটাতে আরেকটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে বলে জানান তিনি। সেখানে সেবা সম্পর্কিত সব তথ্য দেয়া হবে। এই বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর কারও মধ্যে কোনো শঙ্কা থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, লেবাননসহ অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার পর সেখানে বৃটিশ কাউন্সিলের সেবা চালু থাকলেও বাংলাদেশে কেন বন্ধ করে দেয়া হলো? এব্যাপারে বৃটিশ কাউন্সিলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশে গুলশান হামলার প্রেক্ষাপটটি একেবারে নতুন। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত নই। কোন সময় কী হয়, সেটি বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ যেসব দেশে প্রতিনিয়ত জঙ্গি হামলা হয়, সেখানেও সিকিউরিটি বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশে যেহেতু এ ধরনের ঘটনা নতুন তাই সিকিউরিটি মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

রয়্যাল চার্টার দ্বারা পরিচালিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা বৃটিশ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালে। পৃথিবীর শতাধিক দেশে এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে। প্রায় দুই হাজার শিক্ষকসহ আট হাজার কর্মী রয়েছে সংস্থাটির। বাংলাদেশে বৃটিশ কাউন্সিলের ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে অফিস রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে প্রধান অফিস ছাড়াও ঢাকার ধানমণ্ডি, উত্তরা এবং গুলশানে শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। শিক্ষা প্রসারে বিভিন্ন কার্যক্রম ছাড়াও সামাজিক সাংস্কৃতিক নানান অঙ্গনে জড়িয়ে রয়েছে বৃটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ অফিস।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049080848693848