সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবরোধে প্রায় চার ঘণ্টার বেশি আটকে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। এ সময়ে ভিসির ওপর হামলারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবরুদ্ধ ভিসিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উদ্ধারে এগিয়ে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। উপাচার্যকে উদ্ধার করতে এসে চার দফা দাবিতে সাত কলেজের অধিভুক্তি বিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (২৩শে জানুয়ারি) দুপুর থেকে নিজের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার পর বিকেলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ২০-২৫ জনের একটি দল তাকে মুক্ত করতে এগিয়ে যায়।
উপাচার্যকে উদ্ধারে আন্দোলনকারীদের উপর কয়েক দফায় হামলা চালিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে গত ১৫ জানুয়ারির আন্দোলন কর্মসূচিতে ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের ‘নিপীড়নের’ প্রতিবাদে বর্তমানের ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়।
অধিভুক্তি সমস্যার সমাধান ছাড়াও নিপীড়নে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বহিষ্কার ও প্রক্টরের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে গত সপ্তাহ থেকে এই আন্দোলন চালিয়ে আসছে তারা।
এদিন দুপুর ১২টায় উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে এসে অন্তত তিনটি ফটক একে একে ভেঙে বেলা দেড়টার দিকে উপাচার্যের দরজার সামনের করিডোরে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
তিন ঘণ্টার বেশি অবরুদ্ধে থাকার পর বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বোর্ড অব এডাভান্সড স্টাডিজের একটি সভায় অংশ নিতে সিনেট ভবনে যেতে নিজের কার্যালয়ের পেছনের ফটক দিয়ে বের হন উপাচার্য; পথে উপাচার্যের চারপাশ ঘিরে অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মাসুদ আল মাহাদী উপাচার্যের কাছে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরে তা পূরণের দাবি জানান।
রড দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জবাবে আন্দোলনকারীরা প্রক্টরের পদত্যাগ এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রত্যাহারের দুটি দাবি তৎক্ষণাৎ ঘোষণা দিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তাদের ভাষ্য, এটার জন্য কোনো প্রক্রিয়ার দরকার নেই।
এর মধ্যেই বেলা পৌনে ৪টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসানসহ ছাত্রলীগের ২০-২৫ জন নেতাকর্মী ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন।
এসময় উপাচার্যের কক্ষের সামনের করিডোরে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রড নিয়ে তাড়া করে কয়েকজনকে মারধরও করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এরপর কিছুক্ষণের জন্য অবরোধকারীদের উপাচার্যের দরজা সামনে রেখে সরে গেলেও বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এসে লোহার রড় ও লাঠিশোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থানে হামলা চালায়।
হামলার পর উপাচার্য কার্যালয় থেকে সিনেট ভবনের দিকে যাওয়ার ফটক দিয়ে চলে যেতে চাইলেও সেখানে আরেকদল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর হামলার শিকার হয় আন্দোলনকারীরা।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করলে প্রশাসনিক ভবনের ভেতর দিয়ে মূল ফটক হয়ে বেরিয়ে যেতে চান আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মাহাদী, ছাত্র ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির এবং সমাজতান্দ্রিক ছাত্রফ্রন্টের প্রগতি বর্মনও ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছেন।
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৫ জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্রদের হুমকি-ধমকি ও ছাত্রীদের ওপর নিপীড়ন করে আন্দোলন নস্যাৎ করে দেন। এর প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা ১৭ জানুয়ারি প্রক্টর কার্যালয়ের ফটক ভেঙে প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করেন। পরদিন অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।