৭ কলেজে পরীক্ষা-ফল কবে কেউ জানে না, রাজপথে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি কলেজের ২০১৫-১৬ সেশনের স্নাতকোত্তর পর্বের চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত সোমবার। তবে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কেন হয়নি তা জানার উপায় নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ক্যাম্পাস, ওয়েবসাইট—কোথাও উত্তর পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। আবার ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে মাস সাতেক আগে। এখনো ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি। কবে হবে, সে প্রশ্নেরও উত্তর নেই।

সাত কলেজ অধিভুক্তির দুই বছর পার হওয়ার পর এ রকম নানা দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। অথচ সেশনজট দূরীকরণ ও শিক্ষার মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যেই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বেশ এগিয়ে গেছে।

গতকাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ মূল ক্যাম্পাসের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়ের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল সেশনজটমুক্ত করা। সেই চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবেলা করেছি। এখন আর সেশনজট নেই। আমরা এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় যেসব কলেজ আছে সেগুলোতে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে কাজ করছি।’

অধিভুক্ত হওয়া শিক্ষার্থীরা বলছে, রাজধানীর সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির দুই বছর পেরোলেও কোনো সুফল মেলেনি। বরং ভোগান্তি বেড়েছে। বছর শেষে চূড়ান্ত পরীক্ষা, ফল প্রকাশ কিংবা মানোন্নয়নের বিষয়ে কোথাও সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো বিষয়ে জানতে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখিয়ে সেখানে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ মেলে। কিন্তু কোনো ফল আসছে না।

এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনে নেমেছে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ, গণহারে অকৃতকার্যের ঘটনায় খাতা পুনর্মূল্যায়ন, স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন, ঢাবি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেওয়া ও সেশনজট দূরে ক্রাশ কর্মসূচি নেওয়ার দাবিতে গতকাল নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ বুধবারও তারা রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছে।

ঢাকা কলেজের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অধিভুক্ত হলেও কার্যত আমরা কোনো ফল পাচ্ছি না। সময়মতো পরীক্ষা হচ্ছে না। এরপর পরীক্ষা হলে ফলও ঝুলে যাচ্ছে।’

জানা গেছে, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এ কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে পরিচালনার দায়িত্বভার পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি সিদ্ধান্তে সাত কলেজকে অধিভুক্ত করা হলেও তথ্য আদান-প্রদান সংক্রান্ত জটিলতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেষারেষিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত শিক্ষার্থীদের তথ্য না পাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম থমকে যায়। অধিভুক্তির ৯ মাস পর ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ শেষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দানা বেঁধে উঠলে নড়েচড়ে বসে দুই প্রশাসন। এরপর দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদানের পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

ঢাবি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, কোনো পরিকল্পনা ছাড়া হঠাৎ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর দায়িত্বভার নিয়ে বেকায়দায় পড়ে ঢাবি প্রশাসন। শুরুতে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। সব কিছু স্বাভাবিক করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। নিয়মিত পরীক্ষা ও ফল প্রকাশে কাজ করছে প্রশাসন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী বলেন, ‘কোনো বর্ষের শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৯টি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। আবার অধিভুক্তির পর চারটি পরীক্ষা আমরা নিয়েছি। আগের পরীক্ষা ফল পাওয়ার পরই সব কিছু সমন্বয় করতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। আশা করছি, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ফল প্রকাশ, নতুন পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা থাকেন। এ পরীক্ষার ২০ শতাংশ খাতা মূল্যায়ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা; আর ৮০ শতাংশ মূল্যায়ন করেন কলেজের শিক্ষকরা। অধিভুক্ত হওয়ার পর শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026309490203857