হেমন্তের হালকা হিমেল সকাল। কুয়াশার চাদর পেরিয়ে একে একে প্রবেশ করছিলেন বিশিষ্টজনেরা। দীর্ঘদিন পর একে অপরের সঙ্গে দেখা হওয়ায় আড্ডা মেতে উঠেন মুহূর্তেই। কি প্রবীণ কি নবীন- সকলেই ছিলেন এ তালিকায়। সবার প্রাণের সম্মিলনে মিলিত হওয়ার মধ্য দিয়ে শনিবার দিনভর অনুষ্ঠিত হলো বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৪১তম বার্ষিক সভা। যাতে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্টজনকে সম্মানসূচক ফেলোশিড এবং বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়।
শিল্পী তপন মাহমুদের পরিচালনায় সঙ্গীত সংগঠন বৈতালিকের শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বার্ষিক সভা শুরু হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রয়াত গুণী ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ ও তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ও সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ২০১৭-২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং ২০১৮-২০১৯ সালের বাজেট অবহিত করেন। সে সঙ্গে ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী সারাদেশ থেকে আগত একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য ও সদস্যদের সম্মতিক্রমে অনুমোদন ঘোষণা করেন বার্ষিক সাধারণ সভার সভাপতি এবং একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণায় কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা বিপুল। আজকের সাধারণ সভায়ও একাডেমির সদস্যবৃন্দ নানা মতামত ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলা একাডেমি যেমন এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তেমনি সদস্যরাও একাডেমি পরিবারের অংশ। আমরা আশা করি, আগামী দিনগুলোতে বাংলা একাডেমি সকলের সহযোগিতায় তার কার্যক্রম আরো সুচারুরূপে পালন করতে সক্ষম হবে।
সকালের পর্ব শেষে বিকেলের পর্বে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। ফেলোশিপপ্রাপ্তরা হলেন অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম (শিক্ষা ও গবেষণা), শিল্পী মনিরুল ইসলাম (চারুকলা), মঞ্জুলিকা চাকমা (কারুশিল্প), এস এম মহসীন (নাট্যকলা), ডা. সামন্ত লাল সেন (চিকিৎসাসেবা), শিল্পী রওশন আরা মুস্তাফিজ (সঙ্গীত) এবং পলান সরকার (বইবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠায়)। অসুস্থ থাকায় পলান সরকারের পক্ষে ফেলোশিপ গ্রহণ করেন তার জ্যেষ্ঠ সন্তান মো. হায়দার আলী।
অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার, মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার, কবীর চৌধুরী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। যথাক্রমে যা পেয়েছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মুহম্মদ নূরুল হুদা, অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ এবং আবিদ আজাদ (মরণোত্তর)। প্রথম তিন পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লাখ টাকা এবং শেষ পুরস্কারের অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা। আবিদ আজাদের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন তার জ্যেষ্ঠ সন্তান তাইমুর রশীদ।