খুলনার ৭টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির সুপারিশ করেছেন খুলনার জেলা প্রশাসক ও জেলা পর্যায়ের ভর্তি কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। সরকারি স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলেও সম্প্রতি কিছু শিক্ষার্থীর ভর্তির আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদনে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী কর্মকর্তার সুপারিশ থাকায় তা ‘ভর্তির জন্য অনিবার্য’ বলে বিবেচনা করেছে জেলা ভর্তি কমিটি। তাই আবেদনগুলো প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পাঠিয়ে এসব শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। খুলনা জেলা সদরের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জানা গেছে, কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতা জেলার ৭টি সরকারি স্কুলে ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম এবং ৮ম শ্রেণিতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদনে সুপারিশ করেছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো হল, খুলনার সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা জিলা স্কুল, খুলনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সরকারি মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গভ. ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়। বিষয়টি খুলনা জেলা সদরের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত সভায় উত্থাপিত হয়। সভায় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের আবেদনগুলো পাঠিয়ে ভর্তির সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছে সূত্র।
সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, সময় শেষ হলেও ৭টি সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির বেশ কিছু আবেদনে সুপারিশ করেছেন খুলনার কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এবং প্রভাবশালী কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারির ভর্তি সংক্রান্ত সভায় আলোচনা করা হয়। রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী কর্মকর্তারা সুপারিশ করায় ‘মানবিক ও প্রশাসনিক’ কারণে আবেদনগুলো ‘ভর্তির জন্য অনিবার্য’ বলে বিবেচনা করা হয়েছে সভায়। এতে সভাপতিত্ব করেন খুলনার ডিসি মোহম্মদ হেলাল হোসেন। প্রভাবশালীদের করা আবেদনগুলো প্রধান শিক্ষকদের কাছে পাঠানোর জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মইনউদ্দিন হাসানকে নির্দেশ দিয়ে শেষ হয়
সভা।
সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে খুলনার স্কুলগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণিতে ৭০ থেকে ৭৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুপারিশ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মইনউদ্দিন হাসান। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়। উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে সরকারি স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার একটি সরকারি স্কুলে প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাকে জানান, এরকম ৭০ থেকে ৭৫ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ডিসি স্যার চিঠি দিয়েছেন। আমার জানা মতে, সবচেয়ে বেশি করোনেশন স্কুলে ২৭ জনকে ভর্তি নিতে বলা হয়েছে। জিলা স্কুলে ১১ জনকে ভর্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ডিসি স্যার ভর্তি কমিটির সভাপতি, তিনি বিষয়টি ভালো জানবেন। শুনেছি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তদবিরে এসব শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
ভর্তি কার্যক্রম শেষ হবার ২ মাস পড়ে সরকারি স্কুলে ভর্তির সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার ডিসি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, সরকারি কাজ করতে হলে অনেক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বিষয়টি নিয়ে ভর্তি কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি পাঠিয়ে ভর্তির সুপারিশ করা হয়েছে।