সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিচার শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত পলাতক সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই আদেশ দেন।

এর আগে দুদকের এই মামলায় অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গত ৫ জানুয়ারি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।

গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এ পাঠানো হয়।

আদালত সূত্র বলছে, এই মামলায় গ্রেপ্তার কারাগারে থাকা ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীকে (বাবুল চিশতী) কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আর আদালতে হাজির ছিলেন জামিনে থাকা মামলার আসামি ফারমার্স ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ক্রেডিট প্রধান গাজী সালাহউদ্দিন এবং ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীম। 

যে আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তারা হলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, গুলশান শাখার ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, এস কে সিনহার কথিত পিএস রণজিৎ চন্দ্র সাহা, রণজিতের স্ত্রী সান্ত্রী রায় (সিমি), টাঙ্গাইলের মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা। আদালতে উপস্থিত তিন আসামি নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান।

দুদক জানায়, এস কে সিনহার বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই মাসে মামলা করে সংস্থাটি। মামলায় ভুয়া তথ্য দিয়ে ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে অন্যের নামে চার কোটি টাকার ঋণ সৃষ্টি করে পরে তা এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়, সেই ব্যাংক হিসাব থেকে পরবর্তী সময়ে টাকা স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে পাচার করা হয়।

দুদক সূত্র বলছে, মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বিদেশে অবস্থারত এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে নতুন করে আসামি হয়েছেন ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী)।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে চার কোটি টাকা ভুয়া ঋণ নিয়ে একই দিনে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করেন। পরে ওই টাকা ব্যক্তিগত হিসাব থেকে অস্বাভাবিক নগদে এবং চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে অন্য হিসাবে হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। একই সঙ্গে ওই টাকার উৎস ও অবস্থান গোপনের মাধ্যমে পাচার বা পাচারের চেষ্টায় সম্পৃক্ত ছিলেন।

এজাহারে বলা হয়, জনৈক মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুটি চলতি হিসাব খোলেন। পরদিনই তারা দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। ব্যাংকে হিসাব খোলা এবং ঋণ আবেদনপত্রে দুজনই তাদের ঠিকানা বাড়ি নম্বর ৫১, সড়ক নম্বর ১২, সেক্টর ১০, উত্তরা আবাসিক এলাকা উল্লেখ করেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই বাড়ি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ব্যক্তিগত বাড়ি।

এজাহার বলছে, ঋণসংক্রান্ত আবেদন দুটি কোনো রকম যাচাই-বাছাই, রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ এবং ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতি না মেনেই শুধু গ্রাহকের আবেদনের ওপর ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদসহ শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঋণপ্রস্তাব তৈরি করে হাতে হাতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান।প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই ছাড়াই অফিস নোট তৈরি করে এতে স্বাক্ষর দিয়ে সাবেক এমডি এ কে এম শামীমের কাছে নিয়ে যান। ফারমার্স ব্যাংকের ঋণনীতি অনুযায়ী ঋণ দুটির প্রস্তাব অনুমোদন করার ক্ষমতা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের না থাকা সত্ত্বেও তিনি এ-সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই বা নির্দেশনা না দিয়ে ওই ঋণপ্রস্তাব দুটির অনুমোদন দেন।

ঋণ অনুমোদন হওয়ার পরের দিনই অনুমোদিত চার কোটি টাকার পৃথক দুটি পে-অর্ডার সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে ইস্যু করা হয়। পরে ওই পে-অর্ডার সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার হিসাবে জমা হয়। তিনি বিভিন্ন সময়ে অস্বাভাবিক ক্যাশ ও চেক/পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031499862670898