গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিনকে তার নিজ কর্মস্থল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে, এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।
গোপালগঞ্জের বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্যের পদ থেকে সোমবার অব্যাহতি পাওয়ার পরের দিন মঙ্গলবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় যোগদানের অনুমতিসহ দু’দিনের ছুটির জন্য বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধানের মাধ্যমে আবেদন করেন নাসিরউদ্দিন। তবে তার যোগদানের বিষয়ে ঘোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ড. খন্দকার মো. নাসিরউদ্দিনের বাকৃবিতে যোগদানের বিষয়ে আপত্তি এবং উপযুক্তদের বিচারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাকৃবি শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ বাকৃবির শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। তিনি তার নিজ কর্মস্থলে বাকৃবির বায়োটেকনোলজি বিভাগে যোগদানের জন্য আবেদন করেছেন। অধ্যাপক নাসিরের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) সত্যতা পেয়েছে এবং তার ভিত্তিতে তাকে অপসারণের সুপারিশ করেছে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের কাছে অধ্যাপক নাসিরউদ্দিনের উপাচার্য হিসেবে অনিয়ম ও অনৈতিকতার উপযুক্ত বিচার দাবি জানাচ্ছি।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে স্বৈরাচারী আচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করছে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২৪ সেপ্টেম্বর ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর উপাচার্য নাসিরউদ্দিনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে ভিসি নাসিরকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। সে রাতেই পুলিশ প্রহরায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন ভিসি নাসির। পরে ৩০ সেপ্টেম্বরে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি জানান, পদত্যাগপত্র দাখিল করেছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসির উদ্দিন।
এদিকে বাকৃবির আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, উনি (নাসিরউদ্দিন) বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের নেতা ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মুখোশ পরিবর্তন করে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের ফোরামে নাম লেখান। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় এলাকার দাপটে উপাচার্য পদ ভাগিয়ে নেন। উপাচার্য হয়েই তিনি ক্ষমতার জোরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি একটি পরিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যোগ্যপ্রার্থী থাকা সত্ত্বেও পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে অন্তত ২৪ জনকে শিক্ষক, শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারী, মালী, ড্রাইভার, বাস হেল্পার, সিকিউরিটি অফিসারসহ বিভিন্ন পদে চাকরি দেন। তার এ কর্মকাণ্ড শুধু বাকৃবি নয় বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করেছে। শিক্ষকরা অধ্যাপক নাসিরউদ্দিনের বাকৃবি থেকে অব্যাহতিসহ উপযুক্ত বিচারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার আগে অধ্যাপক ড. খন্দকার মো. নাসিরউদ্দিন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে বাকৃবি প্রশাসন তার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।