সারাদেশে দূর্বল ও অকার্যকর স্কুল ১০৮৬টি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সারাদেশে ভালো মাধ্যমিক স্কুল মাত্র এক হাজার আঠারোটি । আর দূর্বল স্কুল এক হাজার আটান্ন ও একেবারে অকার্যকর ২৮টি। সবচাইতে বেশি ‘বি’ ক্যাটাগরির স্কুল নয় হাজার ৩৬৭টি। ‘সি’ ক্যাটাগরির স্কুল ছয় হাজার ৩৪৪টি।  সর্বশেষ ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ‘স্ব-মূল্যায়ন’ জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সারাদেশের মোট আঠারো হাজার চারশ পনেরোটি স্কুল মূল্যায়নের আওতায় এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী  দূর্বল ও বিদ্যালয়ের ঠিকমতো পাঠদান হয় না। শিক্ষার পরিবেশও ভাল নেই, পরীক্ষার ফলও ভাল হয় না।

জানা গেছে, মোট সাত সূচক ও ৪৫টি সহ-সূচকের ভিত্তিতে এই মূল্যায়ন জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

সাত সূচক হলো: শিখন ও শেখানোর পরিবেশ, প্রতিষ্ঠান প্রধানের নেতৃত্ব, শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব, শিক্ষার্থীদের কৃতিত্ব, সুপেয় পানি এবং টয়লেটের ব্যবস্থা ও সহশিক্ষাক্রমিক কর্মসূচি এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম। এই সূচকগুলো কেমন অবস্থায় আছে, তা প্রধান শিক্ষকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল।

এর ভিত্তিতে বিদ্যালয়গুলোকে ‘এ’ (অতি উত্তম), ‘বি’ (ভাল), ‘সি’ (মধ্যম), ‘ডি’ (দুর্বল) ও ‘ই’ (অকার্যকর) এই পাঁচ শ্রেণীতে ভাগ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।  প্রতিবেদনটি চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশ করার প্রস্তুতি চলছে।

নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রধানশিক্ষকদের এমন মূল্যায়নের জন্যই এ প্রতিবেদনের নাম ‘স্ব-মূল্যায়ন’।  নির্ধারিত ফরমে তথ্যছক পূরণ করে দেন প্রধান শিক্ষকরা। প্রাথমিক যাচাই করেন উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারগণ। পরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি বা সেসিপের একটি প্যানেল যৌথভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করে সারাংশ তৈরি করে।

আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকারের লোন করা টাকায় পরিচালিত হয় এ স্ব-মূল্যায়ন জরিপ, প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশ হয়। ২০১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে আলোচনায় আসে স্ব-মূল্যায়ন জরিপ।প্রথম কাজ শুরু হয় ২০১০ খ্রিস্টাব্দে।

খুব শিগগিরই ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জরিপের ফল প্রকাশ হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের স্কুলভিত্তিক সর্বশেষ [২০১৬ খ্রিস্টাব্দের] স্ব-মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিয়ে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।

মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্বল ও অকার্যকর বিদ্যালয়ে ঠিকমতো পাঠদান হয় না। শিক্ষার পরিবেশও ভাল নেই, পরীক্ষার ফলও ভাল হয় না।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও স্ব-মূল্যায়ন হয়। সেই সব দেশে থেকেই বিদেশীদের পরামর্শ অনুযায়ী আমদানী করা হয় স্ব-মূল্যায়ন। কিন্তু ওই সব দেশের সাধারণ মানুষই অনেক ন্যায়পরায়ন, চুরি-ডাকাতি হয় না। সরকারি লোকেরা নিজেদের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি ভাবেন। সেই সব দেশের বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকেরা অনেক অনেক দায়িত্বশীল। সৎ ও ন্যায় পরায়ন। তারা তথ্য গোপন করেন না। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও আশা করতে পারব না যে প্রধান শিক্ষকেরা তথ্য গোপন করবেন না। এটা এখনও দুরাশা। তাই বাস্তব চিত্র আরও খারাপ হতে পারে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অ্ধিদপ্তরের পরিকল্পনা শাখার উপ-পরিচালক খুরশীদ আলম প্রতিবেদন তৈরির মূল কাজ করছেন। এ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষা ক্যাডারের এ কর্মকর্তাকেই এই প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অতীতে তিনি ক্যামব্রিয়ানের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব মূল্যায়ন না এমপিওভুক্তির কাজে আসে, না আসে শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধিতে। এমনকি গত সাত বছরে স্ব-মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরিতে খরচ হওয়া প্রায় পঞ্চান্ন কোটি টাকার অধিকাংশই গেছে আয়োজন আর প্রতিবেদন তৈরি, প্রকাশ ও মিটিং-সিটিং এলাউন্স, ফোল্ডার তৈরি ইত্যদিতে। এসব মূল্যায়ন সেদিনই গ্রহণযোগ্য হবে যেদিন সরকার নিজেই এই মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন।

জানতে চাইলে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, মূল্যায়নের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলো আত্মবিশ্লেষণ করতে পারে। এর ভিত্তিতে কোথায় কোথায় সমস্যা আছে, তা চিহ্নিত হয় এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া যায়।

স্ব-মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি তৈরি করতে দেশের সব মাধ্যমিক স্কুলকে বাধ্য করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করতে সব স্কুলেই একটি ফরম পাঠানো হয়েছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ এই ফরমে তথ্য পাঠান। এরপর উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে যাচাই শেষে তা অধিদফতরে আসে। এরপর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ প্রতিবেদন তৈরি করে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055580139160156