সিইডিপি: অনলাইনে নয়, বিদেশেই প্রশিক্ষণ নিতে চান শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অনলাইনে নয়, মালয়েশিয়ার নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েই প্রশিক্ষণ ক্লাসে অংশ নিতে চান কলেজ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইডিপি) প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা। করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে এতদিন অনলাইনে প্রশিক্ষণের ক্লাস হলেও আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সরসরি ক্যাম্পাসে গিয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সুযোগ দিচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার। তাই প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা অনলাইনে নয়, সরাসরি মালয়েশিয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে গিয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে চান। তারা হতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী। প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে তাদের দাবির কথা জানিয়েছেন।  

দেশে শিক্ষার মানোন্নয়নে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে কলেজ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প চালু করা হয়। কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষকদের কলেজ পরিচালনায় পারদর্শী করে গড়ে তোলাই ছিল ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যায়ে হাতে নেয়া প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পটি বাস্তাবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় মালয়েশিয়ার নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ইন এডুকেশন কোর্সে শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তাই, প্রশিক্ষার্থীদের ক্লাস হচ্ছিল অনলাইনে। যদিও অনলাইন ক্লাসে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে-সে প্রশ্ন প্রশিক্ষণার্থীদের। তাদের মতে, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্টসহ নানা বিষয়ে জানানো হয় প্রশিক্ষণে। তাই, হাতে কলমে প্রশিক্ষণ না নিলে কিছুই বোঝা যায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রশিক্ষাণার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ২০১৯ খ্রিষ্টব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে অংশগ্রহণের আবেদন চেয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ১ম ও ২য় সেমিস্টারের প্রশিক্ষণার্থীদের ৩ সপ্তাহ করে মোট ৬ সপ্তাহ মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ক্লাস চলছিল। আর এ দুই সেমিস্টারের মধ্যবর্তী সময়ে এবং ৩য় সেমিস্টারে ডিসারটেশনের সময় শিক্ষকদের অনলাইনে ক্লাস চলবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে চলতি বছরের জানুয়ারির পর শিক্ষকরা সরাসরি ক্লাসে অংশ নেয়ার সুযোগ পাননি। তখন থেকেই অনলাইনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ক্লাসগুলো নেয়া হচ্ছে।

তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রশিক্ষণার্থীদের একটি দল ২য় সেমিস্টারের ২১ দিনের ফেস টু ফেস ক্লাসের পরিবর্তে অনলাইনে ক্লাস করেছেন। তবে শিক্ষকরা অনেক কিছুই বোঝেননি। প্রশিক্ষণের মৌলিক বিষয়গুলো যেমন হাতে-কলমে শিক্ষা, গ্রুপওয়ার্ক, গ্রুপ প্রেজেন্টেশন, সলো প্রেজেন্টেশন, প্রদর্শনী ক্লাস, টিউটরদের সাথে সরাসরি ইন্টার এ্যাকশন ক্লাস ছাড়া কোনভাবেই আয়ত্ত্ব করা সম্ভব না।  নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের অনিশ্চয়তা, উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগের অভাব ও অবকাঠামোগত অপর্যাপ্ততা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এছাড়া একটানা ৬ ঘন্টা অন-লাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ কঠিন। আবার, ইংরেজিতে তুলনামূলক দূর্বল প্রশিক্ষণার্থীর জন্য অনলাইন ক্লাস থেকে শেখা কঠিন।

ইতোমধ্যে সিইডিপির প্রশিক্ষণে সরসরি ক্লাস করা একাধিক শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রশিক্ষণ তারা মূলত তাদের দেশে কিভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়-সে বিষয়ে ধারণা পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে না গেলে তাদের ক্লাস বা প্রতিষ্ঠান ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে সবকিছু আয়ত্ত্ব করা যায় না। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়টির আদলে নিজেদের ক্লাস সাজিয়েছেন। সেভাবেই প্রতিষ্ঠানের সব দিক ব্যবস্থাপনা করছেন। অনলাইন ক্লাসের মধ্যেমে এ অভিজ্ঞতা অর্জন প্রায় অসম্ভব।

প্রশিক্ষণার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, অনলাইন ক্লাস বন্ধ করে সরাসরি যাতে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গিয়ে আমরা প্রশিক্ষণ নিতে চাই। কোহার্ট-৫ নামের একটি দল অনলাইনে ক্লাস করেছেন। তাদের কাছ থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা শুনেছি। তাই আমরা অনলাইনে ক্লাস করতে চাচ্ছি না। মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীরা দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। তাই আমরা অনলাইনে প্রশিক্ষণের বদলে সরাসরি ক্লাস করে প্রশিক্ষণ নিতে চাই। 

কোহার্ট-৬ দলের প্রশিক্ষণার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা ১ম সেমিস্টারের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কিন্তু শুনছি ২য় সেমিস্টারের ক্লাস অনলাইনে হবে। তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। যারা অনলাইনে প্রশিক্ষণ ক্লাস করেছেন তারা অনেক প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়েছেন। সরাসরি ক্লাস করে মাত্র ২৮- ৩৫ শতাংশ পাস করে। অনলাইনে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে না। অনলাইনে প্রশিক্ষণ কার্যকরী করা সম্ভব হবে না। প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হাতে-কলমে শেখার বিষয়। যদি করোনা মহামারির এ অবস্থায় আমাদের সিইডিপির প্রশিক্ষণ ৬ মাস পিছিয়ে কোর্সের শর্তানুযায়ী সরাসরি ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয় সেটি খুবই কার্যকর হবে।

তবে, সরাসরি প্রশিক্ষণ ক্লাস অনুষ্ঠানের আবেদন জানিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের কাছে আবেদন দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিষয়টি জানতে পারলে জটিলতা নিরসন হবে বলে শিক্ষকদের বিশ্বাস।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061180591583252