‘শিক্ষকদের বেতন না বাড়াইলে শিক্ষা সমস্যার সমাধান অসম্ভব। শিক্ষা পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করা দরকার। প্রাথমিক শিক্ষার সরকারিকরণ চাই।’
‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রান্স অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে ১৪ খণ্ডের সংকলনের প্রথম খণ্ডে (১৯৪৮ থেকে ১৯৫০) শিক্ষা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর এসব বক্তব্য উঠে এসেছে।
শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণভবনে এ বইটির মলাট উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা। সাবেক শিক্ষাসচিব ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল জাদুঘরের কিউরেটর মো: নজরুল ইসলাম খান এতে বক্তৃতা করেন। ৫৮২ পৃষ্ঠার বইটিতে অনেক জায়গায় শিক্ষাসম্পর্কিত কথা আছে। ‘দৈনিক শিক্ষা’র হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি খুঁজে বের করে পাঠকের সামনে হাজির করা হলো। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ডিসেম্বর তৎকালীন সংবাদপত্র দৈনিক ইত্তেহাদে ‘দৌলতপুর কলেজে ছাত্রসভা’ শীর্ষক একটি খবরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বক্তব্য রয়েছে। সে সভায় তরুণ শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বক্তব্যের কথা বইটিতে রয়েছে।
দৈনিক ইত্তেহাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষের সভাপতিত্বে ওই ছাত্র সভায় শিক্ষা সম্বন্ধে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষাদীক্ষাই হইল মানব সভ্যতার মাপকাঠি, অথচ আমাদের দেশের অগণিত জনসাধারণকে অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবাইয়া রাখিয়া কোন মুখে আমরা বিশ্ব দরবারে নিজদিগকে সভ্য জাতি বলিয়া গৌরব করিব? আজ দেখিতে পারিতেছেন আমাদের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস হইতে বসিয়াছে। শিক্ষকদের বেতন না বাড়াইলে শিক্ষা সমস্যার সমাধান অসম্ভব। শিক্ষা পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করা দরকার।’
পুলিশের জুলুম উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, দুঃখের বিষয় সব সভা সংগ্রামের নির্ভীক সৈনিক ছাত্র ও যুবকরা আজ অন্যায়ভাবে বৃটিশ আমলের আমলাতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন পুলিশ কর্ম্মচারিগণ কর্ত্তৃক নির্য্যাতিত হইতেছে। রাজশাহীর চারজন ছাত্র কর্ম্মীকে শহর হইতে বহিষ্কার করিয়া দেওয়া হইয়াছে। প্রত্যেক জিলায়ই কর্ম্মীদের উপর অন্যায়ভাবে জুলুম করা হইতেছে। এর তীব্র প্রতিবাদ করার জন্য সংঘবদ্ধ হউন। জননিরাপত্তার নামে বিনা বিচারে আটকের প্রতিবাদ করুন। লেখাপড়ার প্রতি বিশেষ জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা ছাত্র হিসেবে ভাল হতে চেষ্টা করুন। আপনারা শিক্ষায় প্রত্যেকটি শাখায় পারদর্শী হউন।’
তিনি আরো বলেন, ‘সামরিক শিক্ষাকে স্কুল কলেজের পাঠ্য তালিকাভুক্ত করিয়া অবিলম্বে বাধ্যতামূলক করার আপনারা জাতীয় সরকারকে চাপ দিন।’
সভায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রধানত পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে কর্মীদের উপর পুলিশ জুলুমের প্রতিবাদ জ্ঞাপন করিতে আসিয়াছি। তা’ছাড়া আরও তিনটি বিষয়ের প্রতি আপনাদের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করিতেছি। প্রথমতঃ খাদ্যসঙ্কট ও দেশরক্ষার সমস্যাই আমাদের সর্বপ্রধান সমস্যা। দেশরক্ষার জন্য দেশের জনসাধারণের সন্তোষ বিধান করা বিশেষ প্রয়োজন। জনসাধারণের মুখে ভাত না দিতে পারিলে কিছুতেই তাহাদের মন সন্তষ্ট থাকিতে পারে না। তাই দেশরক্ষার ব্যাপারে তাহারা স্বভাবতই পিছনে পড়িয়া থাকে। জনগণের জন্য ভাত-কাপড়ের বন্দোবস্ত করিতে পারলে জনগণ স্বতঃস্ফুর্তভাবে দেশরক্ষা করিতে ঝাপাইয়া পড়ে। শুধু সামরিক শক্তি দ্বারাই দেশরক্ষার চিন্তা অবাস্তব। খাদ্য সমস্যাও দেশ রক্ষার সমস্যা। একে অপরে পরিপূরক।’
বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতায় সামরিক শিক্ষাকে স্কুল কলেজের পাঠ্য তালিকাভুক্ত করে তা বাধ্যতামূলক করার বিষয়েও জোর দেন।
‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধাদের উদ্দেশে।
৫৮২ পৃষ্ঠার প্রথম খণ্ডের দাম রাখা হয়েছে ৯০০ টাকা। একই নকশায় প্রতিটি খণ্ডের প্রচ্ছদ করেছেন সমর মজুমদার। বইটি প্রকাশ করেছে হাক্কানী পাবলিশার্স।