সুদীপ্ত হত্যা : তদন্ত শেষ হয়নি ২ বছরেও

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ৬ অক্টোবর। হত্যা মামলাটি থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তের পর এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। কিন্তু সহসাই অভিযোগপত্র দাখিলের সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

আর এই ফাঁকে গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা পর্যায়ক্রমে জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে কারাগার থেকে। সর্বশেষ গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম। তাঁর নির্দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছিল একজন আসামি।

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে ডেকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তৎকালীন নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। চট্টগ্রাম সিটি কলেজ কেন্দ্রিক রাজনীতিকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে।

হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই বছর সময়ের মধ্যে মামলাটি সদরঘাট থানা পুলিশ এবং নগর গোয়েন্দা পুলিশই বেশির ভাগ সময় তদন্ত করে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর ‘প্রকৃত আসামি’ গ্রেপ্তারের জন্য মামলাটির তদন্তভার পিবিআইয়ে ন্যস্ত করে আদালত। এরপর মামলার তদন্ত শুরু করেন পিবিআই মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।

পিবিআই দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নতুন মোড় নেয়। আসামিদের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশের পর তদন্তে গতি আসে এবং সেই ধারাবাহিকতায় গত ৪ আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত দিদারুল আলম মাসুম। 

এমন অগ্রগতির পরও মামলার অভিযোগপত্র কবে নাগাদ আদালতে দাখিল করা হবে, সেই বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছুই বলতে পারছেন না মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি অস্ত্র এবং তিনটি মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়েছিল। এর মধ্যে অস্ত্রটি এখনো উদ্ধার করা যায়নি। জব্দ হয়নি দুটি মোটরসাইকেলও। এ ছাড়া আরো কয়েকজন আসামি পলাতক আছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। এই কারণে মামলাটির অভিযোগপত্র কবে নাগাদ দাখিল করা সম্ভব হবে, সেটা এখনই সময় নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।’

হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমসহ গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা জামিনে মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জামিন আদালতের এখতেয়ারাধীন বিষয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আমার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।’

মামলার তদন্ত পর্যায়ে এই পর্যন্ত কতোজন আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আরো কয়েকজন জড়িত বলে তথ্য আছে। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।’ হাজতি আসামি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১৬ জনের মধ্যে পিচ্চি হানিফ, রুবেল ও মিজান কারাগারে আছে। বাকিরা জামিনে মুক্তি পেয়েছে।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, আদালত এবং ছাত্রলীগের নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সুদীপ্ত বিশ্বাস সিটি কলেজ কেন্দ্রিক রাজনীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাস্টাস দিয়েছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ‘বড়ভাই’ দিদারুল আলম মাসুম তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী খুনিরা পরিকল্পিতভাবে সুদীপ্ত বিশ্বাসকে হত্যা করে।

‘খুনের নির্দেশদাতা’ এই ‘বড়ভাই’ দিদারুল আলম মাসুম নিজেও সিটি কলেজের ছাত্র ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। পরে যুবলীগ হয়ে এখন আওয়ামী লীগ নেতা। তবে তাঁর নাম ছিল নগর পুলিশের শীর্ষ সন্ত্রাসী তালিকায়। ২০১৩ সাল পরবর্তী সময়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী তালিকা থেকে মাসুমের নাম বাদ পড়ে।

তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাসিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মাসুমকে গ্রেপ্তারের পর দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পিবিআই। রিমাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058310031890869