সুযোগ-সুবিধার পাহাড়ে সরকারি কর্মচারীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চাকরির পেনশনের টাকা সম্পূর্ণ তুলে নেওয়ার পর আবার নতুন করে পেনশন পাওয়ার কথা কেউ কি কখনো কল্পনা করেছিল? এই সুবিধাও সরকার দিয়েছে সরকারি কর্মচারীদের এই আশায় যে তাঁরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। কালের কন্ঠের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বাহরাম খান।

জানা গেছে, অবসর নেওয়ার ১৫ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও বেঁচে আছেন এবং পুরো পেনশন তুলে নিয়েছেন এমন সাবেক সরকারি কর্মচারীদের ২০১৫ সালের জুলাই থেকে নতুন করে পেনশন দিচ্ছে সরকার। এই উদ্যোগের বিষয়ে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অন্তর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। আমাদের মতো বৃদ্ধদের কথা উনার মতো বঙ্গবন্ধুকন্যাই চিন্তা করতে পারেন, যেটা আমরা নিজেরাও চিন্তা করিনি। আল্লাহ তাঁর মঙ্গল করুন।’

পেনশনের ক্ষেত্রে আরেকটি সুবিধা বাড়িয়েছে সরকার। আগে অবসরে যাওয়ার পর মূল বেতনের ৮০ শতাংশ পেনশন দেওয়া হতো, এখন ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকে কর্মচারীদের খোঁজ নেন। সচিবদের এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনারা তো নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিতে জানেন না।’ তিনি সচিবদের জন্য ঢাকায় কয়েকটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন, যেগুলোর কাজ এখন চলমান।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘সরকারপ্রধান কখনো কাউকে তার প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে কার্পণ্য করেন না। আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে এসব প্রাপ্তির বিপরীতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা।’

সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু তাঁদের জন্য প্রণীত আইনে গ্রেপ্তারের আগে সরকারের অনুমতি নেওয়ার যে বিধান রাখা হয়েছে সেটাই সবচেয়ে বেশি সমালোচিত। দশম সংসদের শেষ দিকে আইনটি পাস করা হলেও এখনো সেটি কার্যকর করা হয়নি। অর্থাৎ আইন হলেও সেটার অধীনে এখনো কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করার সুযোগ নেই।

উল্লিখিত সুযোগ-সুবিধার বাইরে সরকারি কর্মচারীদের অনেক ধরনের ছোটখাটো সুবিধার মধ্যে রয়েছে ঝুঁকি ভাতা, ইন্টারনেট ও মোবাইলে কথা বলার খরচ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ, সন্তানদের শিক্ষা ভাতা, চাকরিরত অবস্থায় পঙ্গু হলে কয়েক লাখ টাকা, মারা গেলে তার কয়েক গুণ বেশি, একই অবস্থায় ঋণ থাকলে সেটিও মওকুফ। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া এবং প্রশিক্ষণে লেকচার দেওয়ার জন্য নির্ধারিত ভাতা দ্বিগুণ হয়েছে, ঊর্ধ্বতনদের বাবুর্চি, প্রহরী বিলও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া মৃত্যুর পর স্ত্রী/স্বামীর ভরণ-পোষণসহ অনেক সুবিধাই দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে বৈশাখী ভাতা। চালু হয়েছে হাওর ভাতা।

২০১৭ সাল পর্যন্ত সরকারের প্রাধিকারপ্রাপ্ত তথা বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাওয়া কর্মচারীর মধ্যে ছিলেন প্রশাসনের যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্বরা। গত সরকারের শেষ দিকে উপসচিবদের গাড়ির জন্য বিনা সুদে ৩০ লাখ টাকা ঋণ ও সেটা রক্ষণাবেক্ষণে মাসে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার মাধ্যমে কার্যত তাঁদের প্রাধিকারভুক্ত করেছে সরকার। এর বাইরে সব পর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য বাড়ি করতে ৫ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন সংযোজন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীরাও এই সমাজের অংশ। তাঁদের সুবিধা যেমন বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তেমনি কাজের মানও ভালো হচ্ছে।’

২০১৫ সালে সর্বশেষ বেতনকাঠামো ঘোষণার আগ পর্যন্ত কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি চাকরির চেয়ে বেসরকারি চাকরির প্রতি তরুণদের ঝোঁক ছিল বেশি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সুমন সালেকীন ২০০৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যোগদানের নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন। ওই সময় ব্যাংকের বেতনের চেয়ে ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার টাকা বেশি বেতন পাওয়ায় ব্যাংকে যোগ দেননি। নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণার পর তাঁর আক্ষেপ, ‘এমন হবে কে জানত? দশ বছর বেসরকারি চাকরি করে যে পর্যায়ে এসেছি, সরকারি নতুন বেতনকাঠামোতে একজন তরুণ পাঁচ বছরেই আমাকে ছাড়িয়ে যাবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028049945831299