সুশিক্ষার ব্যাকরণ

মোস্তাফিজুর রহমান শামীম |

দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন শরীর ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ ও উন্নতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবই শিক্ষার উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত। 

তার মতে, প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষের গুণাবলির যথাযথ বিকাশ। যে গুনাবলী নিয়ে মূলত একটি শিশু এই ধরনীতে আগমন হয়েছে। 

একজন মানুষের আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রে যার অবদান বেশি তিনি একজন শিক্ষক। শিক্ষক পৃথিবীতে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ একটি শব্দ। আমাদের সমাজে শিক্ষক বলতে মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যিনি পাঠদান করেন তাকেই বুঝি। 

কিন্তু যিনি শুধু স্কুল-কলেজে পাঠদান করেন তিনিই শিক্ষক নন। যার কাছ থেকে মানুষ জ্ঞান লাভ করে, তিনিই মূলত শিক্ষক। প্রিয় পাঠক আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক কে? আমি প্রথমেই বলব মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সঃ) নাম। কারণ তার দেয়া শিক্ষাতে মুসলিম জাতি একটি একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠিত জাতিতে পরিণত হয়েছে। 
চিন্তা করে দেখুন কতটা বিচক্ষণ ও জ্ঞানী ছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)। 

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে  বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক বললে ভুল হবে না। আমরা স্কুল ও কলেজ জীবন নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ছাড়া অতিক্রম  করতে পেরেছি কি? মোট কথা, আমরা যাদের কাছ থেকে যে কোনও উপায়ে যে কোনও মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করেছি, তিনিই আমাদের শিক্ষক। ছোটবেলায় আমাকে যিনি সাইকেল চালানো শিখিয়েছিলেন, তিনি কোন লেখাপড়া জানতেন না। কিন্তু আমি আজ পঁচিশ বছর পরেও তাকে মনে রেখেছি। কারণ তিনিও আমার শিক্ষক। তিনি আমাকে সাইকেল চালানো সম্পর্কে জ্ঞান দিয়েছেন।  

আমরা যদি নিজেদের বিবেককে কখনও প্রশ্ন করি আমাদের দোষগুলো কী কী? উত্তর খুঁজে বের করাটা খুবই কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। আবার যদি গুণ খুঁজতে যাই, তখন মনে হবে আমিই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ। আসল কথা হলো মানুষ নিজে সহজে তার দোষ-গুণ খুঁজে বের করতে পারে না। কিন্তু যেটা আপনি নিজে পারছেন না সেটা অন্যের জন্য খুব সহজ কাজ। অর্থাৎ যিনি আপনার সম্পর্কে খুবই সামান্য পরিমাণ জানেন, তিনিও খুব সহজেই আপনার দোষ-গুণ তুলে ধরতে পারবেন। বড়ই বিচিত্র আমরা! 

পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ কাজ উপদেশ দেয়া। আর সবচেয়ে কঠিন কাজ সে উপদেশ নিজে মেনে চলা। 
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা শিক্ষা নিতে যায়, তারা কি সবাই মানুষ হয়?! হ্যাঁ দেখতে সবাই মানুষের মতোই হয়। তবে পরিপূর্ণ মানুষ নয়। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে লেখাপড়া করে কেউ হয় সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। আবার কেউ হয় সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি, সমাজ ধবংসের হাতিয়ার। প্রকৃত অর্থে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই মানুষ বানানোর কারখানা নয়। 

প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য মা বাবার ভূমিকা অন্যতম। যেমন, কিছু অভিভাবক আছেন যারা তার সন্তানকে প্রশ্নফাঁসের গুজব থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। আবার কিছু অভিভাবক সন্তানের জন্য নিজেই প্রশ্নের সন্ধান করে বেড়িয়েছেন। যদিও এমন চিত্র এখন আর দেখা যায় না। তবে দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেহাতই কমে যাচ্ছে দিন দিন। বাড়ছে শুধু পরিক্ষার্থীর সংখ্যা। সবাই এখন পরীক্ষার জন্য পড়ে। নিজে জানার জন্য, জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ে না। যারা জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ে তারাই প্রকৃতপক্ষে সমাজের দর্পন। আমরা আরজ আলী মাতুব্বর কে জানি। যিনি একজন দার্শনিক। স্বশিক্ষায় শিক্ষিত আরজ আলী মাতুব্বর একমাত্র নিজের ভালোলাগা থেকেই শিক্ষা অর্জন করেছেন। তার নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি। কিন্তু তার প্রতিভার বিকাশ, তার সৃষ্টি, তার লেখা বই থেকে শিক্ষা নিচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

 

প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য থাকা চাই সুস্থ মন। আমাদের সমাজ আজ অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আক্রান্ত। মা-বাবারা তার সন্তানকে ছোটবেলাতেই মাথায় প্রতিযোগিতা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। সবার টার্গেট সন্তানকে বড় কিছু বানাতে হবে। সন্তান নিজে কী হতে চায় তা জানার প্রয়োজনবোধ করেন না মা-বাবারা। তারা যেটা জীবনে করতে পারনেনি, তা সন্তানকে দিয়ে বাস্তবায়িত করতে চান। অথচ ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা অন্তরালেই থেকে যায়। 

শুধু পয়সা উপার্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া সমীচীন নয়। তবে স্থানকালপাত্রভেদে পয়সা উপার্জন পরোক্ষ উদ্দেশ্য হিসেবে থাকতে পারে। প্রত্যক্ষ ও প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জ্ঞানদান ও জ্ঞান আহরণ।                                                            

লেখক: শিক্ষক, কলামিস্ট

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025560855865479