বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ইমরানা বারী বৃষ্টির আপন ছোট বোন মিশকাতুল জান্নাত তারিনের ‘বি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে তাদের বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি গ্রামে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সঙ্গে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক থাকার সুযোগে তারিন তার বোনের অনৈতিক সহযোগিতায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
ধুনটের গোসাইবাড়ি গ্রামে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোসাইবাড়ি কে ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল বারী বুলবুলের মেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী ইমরানা বারী বৃষ্টি এক বছর আগে বেরোবিতে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। এরপর থেকে ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বেশ কয়েকবার ধুনটের গোসাইবাড়ি গ্রামে দেখা গেছে। তিনি (ভিসি) তার ছাত্র বর্তমানে ধুনট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম জিন্নাহর বাড়িতেও আসতেন। প্রভাষক বৃষ্টিদের গোসাইবাড়ি গ্রামের বাড়ি ও তার মামা এমএ হেলালের এলাঙ্গীর বাড়িতেও যাতায়াত করেন। এভাবে ভিসির সঙ্গে প্রভাষক বৃষ্টির পারিবারিক সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের ছবি রয়েছে। ভিসির সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে প্রভাষক বৃষ্টি স্বল্প সময়ে বেরোবির বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সহকারী প্রভোস্টের দায়িত্ব পান বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক গ্রামবাসী জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষকের ছোট বোন পেলেন এত্ত মার্কস!
তারা আরও জানান, প্রভাষক বৃষ্টির ছোট বোন মিশকাতুল জান্নাত তারিন তেমন মেধাবী ছাত্রী নন। তিনি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪ দশমিক ৯৪ পান। উচ্চ মাধ্যমিকেও জিপিএ-৫ পাননি। স্থানীয় স্কুল থেকে পাস করার পর প্রথমে বগুড়া সরকারি কলেজে (সাবেক বাণিজ্যিক মহাবিদ্যালয়) ভর্তি হন। পরে সেখান থেকে সরকারি আজিজুল হক কলেজে পড়েন। এখানে ভর্তি নিয়েও নানা গুঞ্জন আছে। বেরোবির ভর্তি পরীক্ষায় ‘এ’ ও ‘এফ’ ইউনিটে ফেল করেন। কিন্তু তিনি ‘বি’ ইউনিটে ৮৫ দশমিক ৪৮৫ নম্বর পেয়ে প্রথম হন। রেকর্ডও গড়েন। এ ভর্তি পরীক্ষায় বড় বোন প্রভাষক বৃষ্টি সংশ্লিষ্ট থানায় তারিন এ ভালো ফলাফল করেছেন।
তারা আরও অভিযোগ করেন, প্রভাষক বৃষ্টির বাবা প্রধান শিক্ষক এনামুল বারী বুলবুল সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা করায় একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি গোসাইবাড়ি এ এ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। প্রধান শিক্ষক বুলবুলের বিরুদ্ধে বর্তমান স্কুলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও ভিসি করিমউল্লাহ ও তার ছাত্র শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম জিন্নাহর ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় এসব দুর্নীতি চাপা পড়ে।
এ প্রসঙ্গে বেরোবির প্রভাষক বৃষ্টি ও শিক্ষার্থী তারিনের বাবা এনামুল বারী বুলবুল জানান, তাদের সঙ্গে ভিসির তেমন পরিচয় নেই। তিনি কখনও তার বা শ্যালক হেলালের বাড়িতে আসেননি। তবে তার (ভিসি) ছাত্র উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম জিন্নাহার বাড়িতে এসেছেন। ভিসির সঙ্গে পারিবারিক ছবি থাকা প্রসঙ্গে তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তী সময়ে বলেন, ওসব ছবি শিক্ষা কর্মকর্তা জিন্নাহর বাড়িতে তোলা হয়েছে।
তিনি বলেন, তার মেয়ে মেধাবী ছাত্রী। সে নিজ যোগ্যতায় বেরোবির ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। এখানে ভিসি বা তার মেয়ে প্রভাষক বৃষ্টি কোনো তদবির করেননি। তার মেয়ে স্বল্প সময়ে বেরোবিতে হল প্রভোস্ট ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করায় প্রতিপক্ষ মিথ্যাচার করছেন।
ভিসির ধুনটে আসা, ছবি তোলা ও অন্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম জিন্নাহ বলেন, এটা ব্যক্তিগত বিষয়। সেখানে প্রধান শিক্ষক এনামুল বারী বুলবুলের পরিবার কেন, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার মেয়ে বৃষ্টি বেরোবির প্রভাষক। এছাড়া একজন শিক্ষক তার বাড়িতে আসতেই পারেন।