সাপের মতো বাঁকা হয়ে একদিকে হেলে পড়েছে সেতু। ভেঙ্গে পড়ছে সিমেন্টের স্লাব। লোহার ভীম,হাতলগুলো মরিচা ধরে বাঁকা হয়ে ভেঙ্গে পড়েছে। ঢেউ খেলানো এই আয়রন সেতু দিয়ে প্রতিদিন পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাত শতাধিক শিক্ষার্থীসহ পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার জয়বাংলা বাজার সংলগ্ন সাপুড়িয়া খালের উপর এ সেতুর ভাঙ্গা স্লাবের উপর দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই স্কুল শিক্ষার্থী ও এলাকার মানুষ খালে পড়ে আহত হলেও সেতুটি সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
মাদরাসা থেকে বাসায় ফেরার পথে সেতু থেকে খালে পড়ে আহত হয়েছে মিঠাগঞ্জ কেরাতুল কোরান মাদরাসার ছাত্রী নাইমা। একই সেতু দিয়ে বাবার হাত ধরে যাওয়ার পথে খালে পড়ে আহত হয়েছে পাঁচ বছরের রিফাত। তাদের দু’জনেরই হাত,পা কেটে গেছে। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের খাল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় এই দুই শিশু বেঁচে গেছে। এদের মতো প্রতিদিনই স্থানীয়রা আহত হচ্ছে বলে জানালেন জয়বাংলা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক।
প্রায় ৩০ বছর আগে নির্মিত এ আয়রন সেতু পেরিয়ে প্রতিদিন মিঠাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব মধুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরামগঞ্জ দাখিল মাদরাসা, পূর্ব মধুখালী সালেহিয়া দাখিল মাদরাসা, আলীগঞ্জ দাখিল মাদরাসা, আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। এছাড়া মিঠাগঞ্জ ও আলীগঞ্জ গ্রামের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও এ সেতু পার হয়ে আসা যাওয়া করতে হয়।
সেতুর পাশেই জয়বাংলা বাজারে। এ বাজারে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় করতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেতুটির এ বেহাল অবস্থা।
স্কুল ছাত্রী ফারিয়া জাহান মুন, সুমাইয়া ইসলাম তানহা, সাদিয়া ইসলাম তানজিলা মিঠাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা জানায়, ওই সেতুর ওপার দিয়া বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের সাথে স্কুলে আসে সবাই। প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটায় কোন শিক্ষার্থীকেই একা ছাড়তে চায়না অভিভাবকরা।
আলীগঞ্জ গ্রামের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম, সুমন, মানসুরা, নাইম জানায়, সেতুর উপর উঠলেই ভয় করে। দোলনার মতো দোলে। একদিকে কাঁত হয়ে থাকায় এবং সেতুর স্লাবগুলো ভেঙ্গে পড়ায় হাটতে ভয় করে। এ কারণে বাবা-মা সাথে না আসলে স্কুল-মাদরাসায় যাওয়া হয় না।
মিঠাগঞ্জ গ্রামের জহিরুল ইসলাম ও মো. কাওসার হোসেন বলেন, এ ভাঙ্গা ঢেউ খেলানো সেতুর কারনে সন্তানদের একা ছাড়তে ভয় করে। প্রায়দিনই সংবাদ পাই সেতু থেকে কখনও মোটরসাইকেল,কখনও মানুষ পড়ে গেছে। এছাড়া জরুরী প্রয়োজনে বাজারে আসা-যাওয়া করতেও ভয় হয়।
মিঠাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রবীর চন্দ্র দাস দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানান, বিদ্যালয়ে ৯৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অর্ধেক আলীগঞ্জ গ্রামের। ওই ভাঙ্গা সেতুর কারণে প্রতিদিনই স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম হয়। বর্ষা মৌসুমে তো ভয়ে কেউ আসতেই চায় না।
মিঠাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান কাজী হেমায়েত উদ্দিন হিরন বলেন, সেতুটি গত বছর কিছুটা মেরামত করা হয়েছিলো। সেতুটি মেরামত বা পুনঃনির্মাণ না হবে এতে দুর্ভোগে পোহাতে হবে এলাকাবাসীর। নতুন সেতু নির্মানের জন্য প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।