কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের হাতে উপহার হিসেবে সোনার নৌকা তুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা টাকা তুলে এ সোনার নৌকা তৈরি করেন।রোববার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজীবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষক সমাবেশে প্রতিমন্ত্রী হাতে এ সোনার নৌকা তুলে দেন শিক্ষকরা।
অন্যদিকে মাগুরার শ্রীপুরের নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত রোববার সন্ধ্যায় গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সোনার নৌকার কোট পিন ফিরিয়ে দিয়েছেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর। এ উপহারটি নিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় সোনা ব্যবসায়ী রাম কৃষ্ণ দত্ত।
রাজীবপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় ৫৮ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৪৯ শিক্ষক রয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের জনপ্রতি এক হাজার টাকা ও সহকারী শিক্ষকদের জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। এ হিসাবে চাঁদার প্রায় দুই লাখ টাকা দিয়ে মন্ত্রীর জন্য সোনার নৌকা তৈরি করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক জানান, চাঁদার ওই টাকা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করেন শিক্ষক নেতারা। শিক্ষকদের কাছ থেকে ওই টাকা তোলেন দুই শিক্ষক নেতা।
চাঁদা তুলে প্রতিমন্ত্রীকে কেন সোনার নৌকা দেওয়ার প্রয়োজন হলো—এ প্রশ্ন করা হলে শিক্ষক নেতা রাজীবপুর মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এই প্রথম আমরা মন্ত্রী পেলাম। তাই মন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার পাশাপাশি কিছু একটা তো উপহার দেওয়া দরকার। এ কারণে আমরা শিক্ষকরা বসে সোনার নৌকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
জানা গেছে, ওই শিক্ষক সমাবেশে উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। শিক্ষক ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকেও সোনার নৌকা উপহার দেওয়া হয়। সমাবেশে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন শিক্ষকদের সঠিক সময়ে স্কুলে উপস্থিতি, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা ও মন্ত্রীকে সোনার নৌকা উপহার দেওয়ার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। এটা শিক্ষকদের বিষয়।’ তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়কে সোনার নৌকা উপহার দেওয়ার তথ্যটি আমার কানে আসার পর আমি কয়েকজন শিক্ষককে নিষেধ করেছি, যেন এটা যেন তাঁরা না করেন।’
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকরা টাকা খরচ করে যে আমাকে সোনার নৌকা উপহার দেবেন, এটা আমি জানতাম না। অনুষ্ঠানে যখন তাঁরা ঘোষণা দেন তখন আমি সেটা নিতেও চাইনি। কিন্তু অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার অনুরোধে আমি ওই নৌকা গ্রহণ করেছি।’
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহেদী শাহনেওয়াজ জলিল স্বাক্ষরিত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, প্রতিবেদনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে উদ্ধৃত করে যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে তা প্রতিমন্ত্রীর নয়। এ ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সমাবেশে উপস্থিত সবাইকে কয়েকবার বলেছেন যে সোনার নৌকা হলে নেব না। এরপর উপস্থিত সবার অনুরোধে সবার সামনে সোনার নৌকাটি প্রতীকীভাবে গ্রহণ করে অনুষ্ঠানস্থলেই সঙ্গে সঙ্গে তা ফেরত দিয়ে দেন। এই ব্যাপারে পত্রিকায় যে বক্তব্য এসেছে তা খণ্ডিত ও আংশিক। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
মাগুরায় সোনার নৌকা ফিরিয়ে দিলেন এমপি সাইফুজ্জামান শিখর : এদিকে উপহার হিসেবে দেওয়া সোনার নৌকার কোট পিন ফিরিয়ে দিয়েছেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর।রোববার সন্ধ্যায় মাগুরার শ্রীপুরের নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে এ উপহারটি দিতে এসেছিলেন নাকোলের বাসিন্দা ও সোনা ব্যবসায়ী রাম কৃষ্ণ দত্ত।
সাইফুজ্জামান শিখর এ গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, ‘আমি জনগণের ভালোবাসায় ও অকুণ্ঠ সমর্থনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করে আমি এটির প্রতিদানে আজীবন সচেষ্ট থাকব। প্রতিদানে মানুষের ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু চাই না। ফুলের শুভেচ্ছাই আমার জন্য যথেষ্ট।’
অনুষ্ঠানে নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হুমাউনুর রশিদ মুহিতের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ এস এম রফিকুল আলা, প্রাক্তন ছাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওহিদুল ইসলাম, পুলিশের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৩৫ জন প্রাক্তন ও বর্তমান কৃতি শিক্ষার্থীদের গুণীজন হিসেবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ২০০ শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল ও ২০ জন দরিদ্র নারীদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।