অর্থের অভাবে স্কুল ড্রেস বানাতে না পারায় মেহেদী হাসান সাগর (১৫) নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে যশোরের শার্শা সরকারি মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। মেহেদী হাসান বেনাপোল পোর্ট থানার কাগজপুকুর গ্রামের বাসিন্দা ও ওই স্কুলের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র।
স্কুলের শিক্ষকগণ তাকে স্কুল ড্রেস বানানোর কথা বলে সাত দিনের সময় বেধে দেন। অভাবের সংসারে অনেক কষ্টে ছেলেকে স্কুল ড্রেসের জন্য একটি শার্ট বানিয়ে দেন। সাত দিনের দুই দিন যেতে না যেতেই সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে শুধুমাত্র স্কুল ড্রেসের শার্ট পরে স্কুলে যাওয়ার কারণে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ক্লাস রুম থেকে ডেকে নিয়ে স্কুলের ল্যাব রুমের মধ্যে অমানবিক নির্যাতন করে মেহেদী হাসানকে। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করে স্বজনেরা।
এর আগেও অনেক ছাত্রকে এভাবে মারধরের অভিযোগ রয়েছে এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের পিতা মহিনুর রহমান কান্না কণ্ঠে অভিযোগ করে বলেন, ড্রেস বানানোর মতো অর্থ কাছে না থাকায় স্কুল ড্রেস বানাতে সাত দিনের সময় দেয় স্যাররা। এর মধ্যে আমি একটি শার্ট বানিয়ে দেই। দুই দিন যেতে না যেতেই সোমবার সকালে শার্ট পরে ছেলে স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক এ ঘটনা ঘটায়। খবর পেয়ে আমি স্কুলে গিয়ে আহত ছেলেকে নিয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডলের কাছে যাই। ছেলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। ইউএনও স্যার প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন। পরে আমরা ছেলেকে শার্শা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানকে মারধোরের কথা স্বীকার করে জানান, যা করেছি তার মঙ্গল ও ভালোর জন্য করেছি। এ ছাড়া আর কোনো কথা বলতে চাননি তিনি।
অনেক অভিভাবকরা জানান, এ ধরনের শিক্ষকদের অমানবিক নির্যাতনের কারনে অন্য ছাত্র-ছাত্রীরাও স্কুল বিমুখ হয়ে পড়ছে। এর আগেও তিনি এরকম অনেক ঘটনা ঘটিয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জেল পর্যন্ত খেটেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার মণ্ডল বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট এলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।