অনুমোদনহীন বিদেশি এনজিও গাজীপুর ও সাভারে ২টি স্কুল পরিচালনা করছে। স্কুলের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদ বিদেশিরা নিয়ন্ত্রণ করছে। ওই সব স্কুলে গরিব ও মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ নেই। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গ্লোবাল হোপ বাংলাদেশ নামে সংস্থাটি এই দুটি স্কুল পরিচালনা করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সরজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য উদঘাটন করেছে। তারা এনজিও ও প্রতিষ্ঠান ২টির অনুমোদন সম্পর্কে তাদের আপত্তি জানিয়েছেন। স্থানীয় লোকজন গোয়েন্দা সংস্থার খোঁজখবর নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গ্লোবাল হোপ বাংলাদেশ নামের সংস্থাটি গত বছর নিবন্ধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। তাদের কার্যালয় ১০ সুজাপুর নাগরী, থানা কালীগঞ্জ ও জেলা গাজীপুর। সংস্থাটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সামাজিক উন্নয়ন ও যুব শিক্ষা প্রদান। কিন্তু সংস্থাটি এনজিও ব্যুরোতে নিবন্ধন হওয়ার আগেই ডেনিয়েল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামে দুটি প্রতিষ্ঠান করে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল কোরিয়ান। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
সূত্র জানায়, স্কুল দুইটি সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা খোঁজখবর নিতে গেলে দেখা যায় নিবন্ধনের অনুমতি পাওয়ার আগে স্কুল দুইটি চালু করা হয়েছে। মূলত কোরিয়ান অর্থায়নে স্কুল দুটি পরিচালিত। ২০১৫ সাল থেকে চালু স্কুল দুটি নিয়ে ২০১৭ সালে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। এরপর তদন্ত শুরু হয়। ২০১৭ সালে তদন্ত শুরু হলেও সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে।
অনুমোদনের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু, বিদেশিদের নানা কৌশলে ভিসা নিয়ে অবস্থান, এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন না নেয়াসহ নানা কারণে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠান ২টিতে কি ধরনের লেখাপড়া করানো হচ্ছে তা নিয়ে এতদিন কোন খোঁজখবর নেয়া হয়নি।
আমাদের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধানে জানতে পেরেছেন, কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নে সুজাপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত এনজিও গ্লোবাল হোপ’র তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্লোবাল হোপ এনজিও, ডেনিয়েল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও সুসমাচার চার্চ। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডেনিয়েল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটির প্রাথমিক শাখা ব্যাতিত বাকি অংশের নেই কোন অনুমোদন। স্কুলটিতে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান অব্যাহত রয়েছে।
ডেনিয়েল ইন্টারন্যাশনাল এর প্রধান শিক্ষক ডিন জন রড্রিক্স সংবাদকে জানান, স্কুলটির কার্যক্রম চালু হয় ২০১২ সাল থেকে। প্লে থেকে কেজি পর্যন্ত ইংলিশ মিডিয়াম এবং প্রথম শ্রেণী থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত ইংলিশ ভার্সন। অনুমোদনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ২০১৫ সালে অনুমোদন পেয়েছি প্রথমিক পর্যায়ের এবং গত বছর আমরা বইও পেয়েছি কালীগঞ্জ শিক্ষা অফিস থেকে। স্কুলের ইএমআইএস নাম্বার ৩০৭০২০৮৯৮। তাদের স্কুলে মোট ৯২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের কোন অনুমোদন তাদের নেই। বিষয়টির ব্যাপারে তিনি বলেন, অনুমোদনের জন্য গাজীপুরে আবেদন করা হয়েছে। গ্লোবাল হোপ নামের এনজিও’র কোন অনুমোদন অদ্যাবধি নেই। তবে আপনারা প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে চালাচ্ছেন কিভাবে? এর উত্তরে ডিন জন রড্রিক্স বলেন, ‘গ্লোবাল পার্টনার্স ইন বাংলাদেশ ট্রাস্ট” গঠন করা হয় বিগত ২০১১ সালে। সে অনুযায়ী আমরা ট্রাস্টের অধীনে রয়েছি। গ্লোবাল হোপ অনুমতি পেলে আমরা ওটার অধীনে চলে যাব।
এ ব্যাপারে নাগরী ইউপির ১নং ওয়ার্ডের সদস্য অরুন রোজারিও বলেন, আমার এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি থাকলেও ভিতরের কর্মকা- সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা নেই। শুধু এতটুকুই জানি যে, ভিতরে একটি স্কুল ও হোস্টেল আছে।
এই সম্পর্কে বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন, এটা স্বাধীন দেশের জন্য জন্য হুমকি। তারা দেশের প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের খুশিমতো প্রতিষ্ঠান চালু করছে। এটা আইনগত অপরাধ। তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।