কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে প্রথম ধাপে ১০০টি উপজেলায় কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার পুরান বাউশিয়ায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই নির্মাণকাজে দুর্নীতির অভিযোগে উঠেছে। ৮৮ ফুটের পাইল (স্তম্ভ) বসানো হচ্ছে ১৭ ফুট গভীরে।
গত ২৮ মার্চ ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভিত্তির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ঢালাই করা কংক্রিটের পাইল। ৮৮ ফুট পাইলের কোনোটি মাটিতে ১৭ ফুট, কোনোটি ২৪ ফুট বা ৩০ ফুট বসানো হচ্ছে। পাইলের বাকি অংশ কেটে ওপর থেকে সমান করে ফেলা হচ্ছে। এ অবস্থায় কাঠামোর স্থায়ীত্ব আর কাজের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
এ ছাড়া যে পাইল ব্যবহার করা হচ্ছে, তাও নিম্নমাণের, যা হাতুড়ির সামান্য আঘাতে মাটিতে ঢোকার পরিবর্তে ফেটে বা ভেঙে যাচ্ছে। পাইলগুলো পরস্পর সমান্তরাল আর সোজা থাকার কথা থাকলেও দেখলে মনে হবে বেঁকে একটি অন্যটির ওপরে উঠে গেছে। প্রকৌশলীরা বলছেন, পাইলগুলো ভুল প্রক্রিয়ায় হয়েছে। এর মিশ্রণ ও মাপ সঠিক হয়নি। এর ওপর নির্মাণকাজ করলে তা যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।
পাইল বসানোর দায়িত্বে থাকা রাজমিস্ত্রি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মাটির স্তর অনেক শক্ত হওয়ায় পাইল ঢোকানো যাচ্ছে না।’ পাইল ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘এটি কম্পানির ব্যাপার। তারা যে পাইল দিয়েছে আমরা তাই দিয়ে কাজ করছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘যে পাইল ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। আর ৮৮ ফুটের পাইলকে যদি মাত্র ১৭ ফুট গভীরে বসানো হয় তা কোনোভাবে সঠিক পরিমাণ লোড বহন করতে পারবে না।’ মাটির স্তর শক্তের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাটি পরীক্ষা করে পাইল ডিজাইন করা হয়। মাটি শক্ত হলে তা পরীক্ষার সময় ধরা পড়ত।’
এ বিষয়ে জানতে সাইট অফিসে গিয়ে নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢালী কন্সট্রাকশন লিমিটেডের একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়। তবে সাংবাদিক উপস্থিতিতে ক্ষিপ্ত হন তিনি। অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। নাম না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজের কোনো তথ্য দেওয়া হবে না। কোনো তথ্য দিতে বাধ্য নই।’
দ্বিতীয় দিন সাইট অফিসে গিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইউসুফকে পাওয়া যায়। তবে তিনিও নির্মাণকাজ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিলিটিস বিভাগ মুন্সীগঞ্জের সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণে ৮৮ ফিট পাইলিং করা হচ্ছে। পাইলিংয়ের মান ঠিক আছে। ভেঙে যাচ্ছে কেন?
এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পাইলের তুলনায় হ্যামারের ওজন বেশি হওয়ায় এ রকম হচ্ছে। কোনো প্রকার কম পাইলিং হচ্ছে না।