মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে বিকেজি স্কুলের মাঠ দখল করে দীর্ঘদিন ধরে চলছে পশুর হাট। এতে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে দুই দিন সোমবার এবং শুক্রবার হাটটি বসে। শুক্রবার হাটের দিনে কাঁচামাল থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী নিয়ে হাটটি বসে, কিন্তু সোমবারের হাটটি শুধু পশুর হাট। সোমবার বিদ্যালয়ের মাঠের অর্ধেক অংশজুড়ে বসানো হয় পশুর হাট। পশু আমদানি বেশি হলে রাস্তাতেও পা ফেলার জায়গা থাকে না। শুক্রবার স্বভাবতই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু সোমবার পশুর হাট বসার কারণে শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ অনুপস্থিত থাকে। এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে বলছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের সাথেই বেঁধে রাখা হচ্ছে পশু। শহিদ মিনারে গরু বেঁধে রাখায় শহিদদেরও অবমাননা করা হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
বিদ্যালয় সংলগ্ন বাজারটি কেবল কাঁচাবাজারের জন্য প্রতি বছর ইজারা দিয়ে থাকে সদর উপজেলা প্রশাসন। টানা কয়েকবছর যাবত্ হাটটি জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ইজারা নিয়ে আসছেন। ইজারা আইন ভঙ্গ করে গরুর হাট বসিয়ে হাশিলের (টাকা আদায়ের রশিদ) লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, আমরা মাঠে খেলাধুলা করতে পারি না। হাট শেষে মাঠ এবং রাস্তা গোবরে ভরা থাকে। আমাদের নাক চেপে হাটা-চলা করতে হয়। ক্লাসে দুর্গন্ধের জন্য বসতে পারি না।
বিকেজি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রবীর কুমার মণ্ডল জানান, আমার স্কুলে প্রায় ৮ শত শিক্ষার্থী আছে। স্কুলের অনুমতি না নিয়ে হাট কর্তৃপক্ষ স্কুলের মাঠের একাংশে পশুর হাট বসিয়েছে। সদর উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আমাকে স্কুলের মাঠে হাট বসা বন্ধের জন্য চিঠি দিয়েছে। বিষয়টি আমি হাট কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা কর্ণপাত করছে না। ফলে লেখাপড়া চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিকেজি হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হামিদ ওরফে চান্দু দারগা জানান, একটি মহল প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে স্কুলের মাঠে হাটটি বসিয়েছে। আমি হাট কর্তৃপক্ষকে অনেকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা জোরপূর্বক হাট বসাচ্ছে। আমি হাটটি উচ্ছেদের চেষ্টা করছি।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিপ্লব হোসেন সেলিম জানান, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাজারের ইজারা নিয়ে ইজারা আইন ভঙ্গ করে বাজার ও সংলগ্ন স্কুলের মাঠে পশুর হাট বসাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অপরদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে বারাহিচর বাজারের ইজারাদার মো. সাইফুল ইসলাম বাজার ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে পশুর হাট বসানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি পশুর হাটটি ইজারা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো অনুমোদন পাইনি।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমাউল হুসনা লিজা জানান, আমি মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি আমলে নিয়েছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথেও এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।