স্কুল শিক্ষায় বঙ্গ এখন সিকিমেরও পিছনে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিক্ষিপ্ত ভাবে এক বা কয়েক জন ছাত্রছাত্রীর চোখধাঁধানো ফল নিয়ে উচ্ছ্বাস যত স্বাভাবিকই হোক, তা যে রাজ্যের সামগ্রিক স্কুলশিক্ষার ছবি নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের সদ্য-প্রকাশিত একটি রিপোর্ট সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সেই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষা ক্ষেত্রের নানান মানদণ্ডে এমনকি সিকিম-মিজোরামের থেকেও পিছিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ! মোট ১০০০ নম্বরের মধ্যে বাংলা আছে পঞ্চম গ্রেডে (নম্বর ৬০১-৬৫০)। সিকিম-মিজোরামের গ্রেড চতুর্থ (নম্বর ৬৫১-৭০০)। ৮০১ থেকে ৮৫০ নম্বরের প্রথম গ্রেডে আছে শুধু চণ্ডীগড়, গুজরাত আর কেরল। মঙ্গলবার (১৪ মে) আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মধুমিতা দত্ত।

প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে, দেশের ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্কুলগুলি কেমন ভাবে চলছে, কেন্দ্রের ওই রিপোর্ট (২০১৭-১৮) সেই বিষয়েই। বিভিন্ন মানদণ্ডে স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার নানান দিক যাচাই করা হয়েছে। তার মধ্যে মূল পাঁচটি গজকাঠি হল শিক্ষামান ও ফলাফল, শিক্ষার সুযোগ, শিক্ষার পরিকাঠামো, শিক্ষা-সাম্য এবং স্কুল পরিচালনা। প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে শিক্ষামান ও ফলাফল এবং পরিকাঠামোয় পশ্চিমবঙ্গের স্থান পঁয়ত্রিশে। শিক্ষার সুযোগে বাংলা আছে তেত্রিশে, শিক্ষা-সাম্যে একত্রিশে। স্কুল পরিচালনায় একটু উপরে, আঠারোয় উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের শিক্ষা শিবিরের মতে, ছবিটা মোটেই উজ্জ্বল নয় এবং সব থেকে চিন্তার কথা, সমীক্ষার রিপোর্ট মোটেই ভুল কিছু বলছে না।

সমীক্ষা চালানো হয়েছে ‘পারফর্মিং গ্রেডিং ইনডেক্স’-এর ভিত্তিতে। পাঁচটি বিভাগে বিচারের আওতায় এসেছে ৭০টি বিষয়। তার মধ্যে ছিল সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের ফল। ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান-সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় তারা কত নম্বর পাচ্ছে। স্কুলশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে কত পড়ুয়া। স্কুলে পানীয় জল, শৌচাগার, মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা-সহ পরিকাঠামোও ছিল এই সমীক্ষার বিচার্য। সমাজের বিভিন্ন কোন থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে কতটা সক্ষমতা দেখাচ্ছে, সমীক্ষকেরা সেটা খতিয়ে দেখেছেন। স্কুলের প্রশাসন কতটা উন্নত, সেই বিষয়টিকেও সমধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের সমীক্ষায় এই প্রথম কেন্দ্র যে-ক’টি বিষয়কে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে মেধার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক-সহ নতুন শিক্ষক নিয়োগের হার, বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে ছাত্র ও শিক্ষকদের হাজিরা নথিভুক্তি, অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ ও বদলি, রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে স্কুলশিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ।

৭০টি বিষয়ে মোট নম্বর ১০০০। দেখা যাচ্ছে, ৮৫০ থেকে ১০০০ পায়নি কোনও রাজ্য। প্রথম সারিতে রয়েছে তিনটি রাজ্য। তাদের নম্বর ৮০১ থেকে ৮৫০-এর মধ্যে। তারা হল চণ্ডীগড়, গুজরাত ও কেরল। তাদের গ্রেড ওয়ানের পরের তিনটি গ্রেডেও ঠাঁই হয়নি পশ্চিমবঙ্গের। পঞ্চম গ্রেড (৬০১-৬৫০)-এ অন্য আটটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে আছে বাংলা। এই বিভাগে অন্যেরা হল বিহার, ঝাড়খণ্ড, লক্ষদ্বীপ, মণিপুর, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর ও আন্দামান-নিকোবর। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখিয়েছে।

শিক্ষা মহলের বক্তব্য, এ রাজ্যের স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পর্যালোচনা করলে কারও কাছেই এই ফলাফল খুব অবাস্তব ঠেকবে না। সরকারি স্কুল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু এ দিন বলেন, ‘‘এই সমীক্ষায় ভুল কিছু বলা হয়নি। কিছু স্কুলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ভাল ফল নিয়ে যদি এ রাজ্যের গোটা স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থাকে বিচার করা হয়, তা হবে চরম ভুল। এই রিপোর্টকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা দরকার।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীর নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘এই সরকারের ধারণা, হাতে গরম কিছু পাইয়ে দিলেই বোধ হয় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হয়ে যায়! কিন্তু সেই ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল, কেন্দ্রীয় রিপোর্টই তার প্রমাণ। রাজ্য বিষয়টা দেখুক।’’ রিপোর্টটি দেখে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তার বক্তব্য, সমীক্ষায় ভুল কিছু বলা হয়নি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060470104217529