রাঙামাটি কাউখালী উপজেলা সদরের ছয় কিলোমিটারের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে মাত্র দুটি। সদ্য সরকারিকৃত পোয়াপাড়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কাউখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রায় ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সমাপনী পরীক্ষায় পাস করে ভর্তি হতে হয় এ দুটি স্কুলে। কিন্তু মডেল উচ্চ বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ায় এবার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি আসন নির্ধারণ করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রী মিলে এবার ভর্তি করানো হবে ১২০ জন। এ দুটি বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এমন ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে প্রায় ৩৫০ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী প্রায় দেড় শ।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, পোয়াপাড়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করবে কর্তৃপক্ষ। যদিও বা গড়ে ৬০ ছাত্র ও ৬০ ছাত্রী ভর্তি করে স্কুলটি তাহলেও ২৩০ শিক্ষার্থী সরকারি স্কুলটিতে ভর্তি হতে পারবে না। মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কাউখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থাকলেও ১৫০ ছেলে শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯০ জনের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। ৬ কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় বিপাকে পড়বে ছেলে শিক্ষার্থীরা। এমন ঘটনায় চিন্তায় পড়েছে অভিভাবরা। নিম্নমধ্যবিত্ত এসব এলাকার মানুষ যেখানে ‘নুন-আনতে পানতা ফুরায়’ অবস্থা সেখানে দূরবর্তী স্কুলে ভর্তি করিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব বলা চলে।
পোয়াপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ছাত্রছাত্রী মিলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে ২৩৭ জন। ২০১৮ সালে এর সংখ্যা ১৯২। আর ২০১৯ সালে এর সংখ্যা হবে ১২০ এ। অপরদিকে কাউখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ছাত্রী ভর্তি করিয়েছে ৬০ জন। ২০১৮ সালে সংখ্যা ৭০। তবে ২০১৯ সালে আসন সংখ্যা নির্ধারিত না থাকায় গত দুই বছরের তুলনায় অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে স্কুলটি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও ভর্তি কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা চলছে। ছেলে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তি করানো দরকার। কিন্তু এটি আমি একা বললেইতো হবে না? এর একটি সহজ সমাধান খুঁজতে হবে আমাদের।’
তিনি জানান, কাউখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যদি সহ-শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা যায় তবে সহজে এর সমাধান হতে পারে। তাছাড়া পূর্বের সরকারি ৩১৬টি বিদ্যালয়ে শিফট সিস্টেম থাকলেও নতুন সরকারিকৃত স্কুলে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। এই স্কুলে শিফট প্রোগ্রাম চালু করতেও অনুমতিসহ অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। যেহেতুে বিদ্যালয়টিতে ভর্তি পরীক্ষা ১৯ ডিসেম্বর। সেহেতু ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
পোয়াপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব করুণাময় বলেন, ‘ভর্তি কমিটির গত ৪ ডিসেম্বরের বৈঠকের মাধ্যমে আসন সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্কুলের শিক্ষক স্বল্পতার কারণে আসন সংখ্যা সীমিত করা হয়েছে। আসন সংখ্যা প্রথমে ৬০ জন ধরা হলেও গত বছর ১৯২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ১২০ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার একার কিছুই করার নেই।’
ভর্তি কমিটির সভাপতি ও কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। তবে সরকারি নিয়মের বাইরে কিছুই করার নেই। নিকটবর্তী স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরাও গরিব ঘরের সন্তান ছিলাম। কিন্তু লক্ষ্য ছিল অনেক দূর পৌঁছানোর। তাই টেম্পুতে অনেক দূর গিয়ে পড়ালেখা করেছি।’
বিদ্যালয়ে শিফট করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারে সাথে কথা বলে কিছু করা যায় কিনা দেখব।’