প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাচ্ছেন নন-এমপিও প্রতিনিধি দল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নন-এমপিও শিক্ষকদের আমরণ অনশন এবং ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। এমপিওভুক্তির দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে গতকাল শনিবার পর্যন্ত টানা ছয় দিন অনশন করে এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী। ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, 'এ পরিস্থিতি চললে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়া কঠিন হবে। তাই তাদের প্রতি তাকাতে হবে।' 

এমপিওভুক্তির দাবি অতিসত্বর মেটাতে হবে মন্তব্য করে বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, শিক্ষকরাই শিক্ষার প্রাণ। তাদের বাদ দিয়ে গুণগত শিক্ষা সম্ভব নয়। ন্যায্য দাবির জন্য তাদের ফুটপাতে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হয়। অথচ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে, চাহিদা আছে। 

এদিকে নিজেদের দাবির একটি লিখিত প্রস্তাবনা নিয়ে আজ রোববার অনশনরত 'নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের' প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার গতকাল জানান, শুক্রবার টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি আন্দোলনকারীদের দাবির প্রস্তাবনা লিখিত আকারে রোববার জমা দিতে বলেছেন। শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল আজ তার সঙ্গে দেখা করে প্রস্তাবনা জমা দেবে।

গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার রাতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় ভুষণ রায় অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনিসহ ছয়জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ নিয়ে ছয় দিনে ১২৮ জন নন-এমপিও শিক্ষক ও কর্মচারী অসুস্থ হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ৩৫ জনকে অনশনস্থলে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া দেশব্যাপী নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত ২৩ জুন থেকে চলমান 'পাঠদান বন্ধ কর্মসূচি'ও অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।

গতকাল শিক্ষকদের কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও চরমোনাইর পীর মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করীম, মানবাধিকার আন্দোলনের সভাপতি খাজা জহিবুল্লাহ, হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিটিস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ খান, শিক্ষা পর্যবেক্ষক সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এম শরিফুল ইসলাম, নাগরিকত্ব পরিষদের সমন্বয়কারী গাজী মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। 

বর্তমানে দেশে পাঁচ হাজার ২৪২টি নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিনা বেতনে পাঠদান করছেন প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক। ছয় বছর বন্ধ থাকার পর ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ এমপিওভুক্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর আর কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না করায় ২০১৭ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন করেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি পেয়ে তারা ফিরে যান। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট তথ্য না থাকায় গত ১০ জুন থেকে আবারও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। গতকাল এ কর্মসূচির ২১তম দিন পার হয়েছে। ২৫ জুন থেকে শুরু হয় আমরণ অনশন। ১১ জুন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বাজেটে উল্লেখ না থাকলেও চলতি বছরের বরাদ্দ থেকেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। তবে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সংগঠনের সভাপতি গোলাম মাহমুদন্নবী ডলার বলেন, 'শিক্ষামন্ত্রী আগেও আশা দেখিয়েছেন। তার কথায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না কেউ। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা চাই।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা গেলে দাবি বাস্তবায়ন হবে বলে বিশ্বাস করেন আন্দোলনকারীরা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষা অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেলে কিছুদিন পর পর শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে না খেয়ে রাস্তায় বসে আন্দোলন করতে হতো না। তারা পাঠদানে মনোযোগী হতেন। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। নন-এমপিও শিক্ষকদের দাবি পূরণ না হওয়ার জন্য আমলাতন্ত্র দায়ী বলে মন্তব্য করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমলারা এমনভাবে জেঁকে বসেছেন যে, তারা অন্যকোনো গোষ্ঠীকে গ্রহণ করতে পারছেন না। নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত আছেন। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030889511108398