অভয়নগরের নওয়াপাড়ায় প্রতিনিয়ত আশংকাজনক হারে অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে অসংখ্য কাক। স্থানীয় নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রতিদিন প্রায় ৫-১০টি মরা কাক পরে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কি কারণে কাক মারা যাচ্ছে তা সঠিকভাবে বলতে পারছে না স্থানীয় প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর। এদিকে স্কুলমাঠে কাকের মৃত্যু দেখে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা।
কাকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বার্ড ফ্লুর আতঙ্কে ভুগছেন মুরগির খামারিসহ এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ধারণা করছে, টক্সিনযুক্ত (ময়লাযুক্ত পঁচা-বাসি খাদ্য) খাবার খেয়ে কাকের মৃত্যু হচ্ছে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে কাকের মরদেহ। তাছাড়া জানাগেছে, উপজেলার বিভিন্ন বাজার এলাকায় আশংকাজনক হারে কাকের মৃত্যু হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে উপজেলার প্রধান বাজার নওয়াপাড়া শহরে কাকের মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ: বাড়ছে। রাতে বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নেয়া কাকগুলো সকালে গাছের নিচে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে কাকের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় খামারিসহ এলাকাবাসী বার্ড ফ্লুর আশংকায় ভূগছেন। তারা মরা কাকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রতিদিন স্কুলে এসে কাকের মরদেহ দেখতে পাই। রাতে গাছে থাকা কাকগুলো মৃত্যুবরণ করে স্কুল মাঠে পরে থাকে। যা দেখলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মন খারপ হয়। এ নিয়ে আমাদের অভিভাবকরাও আতঙ্কিত।
নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রতিদিন সকালে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গাছের নিচে পড়ে থাকা ৫-৭টি মরা কাক দেখা যায়। যেগুলো বিদ্যালয়ের কর্মচারীরা নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলা দেয়।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এস এম ফারুক আহমেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিদ্যালয় মাঠে ৫-৭টি কাক ছটফট করে মারা যাচ্ছে। বেশ কয়েকদিন ধরে এমনটি ঘটছে।
উপজেলার গুয়াখোলা গ্রামের বাসিন্দা শিকদার সাঈদ আহমেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কাকের মৃত্যুতে আমরা খুব চিন্তিত। তবে কি কারণে কাকগুলো মারা যাচ্ছে তা আমাদের কারও জানা নেই। কাকের মৃত্যুরোধের বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি।
অভয়নগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লবজিৎ কর্মকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, “কাকের মৃত্যুতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। বাজার এলাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়ে থাকে। এসব আবর্জনার মধ্যে স্থানীয় খাবার হোটেলগুলোর পচা মাংস, ক্লিনিকের বর্জ্য ও বিষাক্ত খাবার থাকে। নওয়াপাড়ার ওপেন চিকেন মার্কেটে মুরগির নাড়ী-ভূড়ি যেখানে-সেখানে ফেলা হয়। এসব এক পর্যায়ে বিষাক্ত টক্সিনে পরিণত হয়।” সেই টক্সিনযুক্ত খাবার খেয়ে কাকের মৃত্যু হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, কাক মারা যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তিন কর্মকর্তাসহ ৫সদস্যের একটি টিম রোববার বিকালে নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ‘এ উপজেলায় বার্ড ফ্লু দেখা দেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।” মৃত্যু হাত থেকে কাকগুলোকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যে তিনি ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।