স্কুলে কেন ঠাঁই নেই একা মায়ের সন্তানের

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

একা মা। তাই শিশুকেও স্কুলে ভর্তি করা হয়নি। এমন একাধিক অভিযোগ ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনে। যদিও সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির তরফে স্পষ্ট করে বলা হয়নি যে, মা একা তার অভিভাবক হওয়াই শিশুকে স্কুলে ভর্তি না নেওয়ার কারণ। কমিশন সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির তরফে লিখিত ভাবে শুধু বলা হয়েছে, ভর্তির যে নির্দিষ্ট ‘অভ্যন্তরীণ  মাপকাঠি’ আছে, তার সঙ্গে খাপ না খাওয়ায় শিশুকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভর্তির এই ‘নির্দিষ্ট মাপকাঠি’ কী, তা-ই সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির কাছে এ বার জানতে চাইছে কমিশন। ইতিমধ্যেই কমিশনের তরফে স্কুল শিক্ষা দফতরকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

কমিশনের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, অভিভাবক একা মা হওয়ায় শহরের একাধিক স্কুল সেই সন্তানকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করেছে বলে বহু অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এমনকি, ভর্তির জন্য অনলাইন ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে বাবার নাম ও ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক। তা না দিলে স্বাভাবিক ভাবেই ফর্ম বাতিল হয়ে যাচ্ছে। শিশুকে ভর্তি নেওয়ার আগে স্কুলে অভিভাবকদের ইন্টারভিউ পর্বেও উড়ে আসে নানা প্রশ্ন। যেমন, কেন ওই একা মা শিশুটির বাবার সঙ্গে থাকেন না, কিংবা কেন তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি (আইভিএফ) ব্যবহার করে হঠাৎ একা সন্তানের মা হয়েছেন। যদিও কমিশনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, জমা পড়া অভিযোগের বয়ানের প্রেক্ষিতে এবং কমিশনের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণও বলছে, অভিভাবক একা মা হওয়ার কারণেই শিশুকে স্কুলে ভর্তি করা হয়নি। যা আইনত করাই যায় না। প্রথমত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শিশুর আইনি অভিভাবক হিসেবে মায়ের পরিচয়ই যথেষ্ট। দ্বিতীয়ত, কোনও শিশুকেই শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। কমিশনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘স্কুলগুলির ভর্তির নির্দিষ্ট মাপকাঠি কী, কোন মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট শিশুটি স্কুলে ভর্তি হতে পারল না, তা নির্দিষ্ট করে আমাদের তরফে জানতে চাওয়া হচ্ছে।’’

কমিশন আরও জানাচ্ছে, অনেক সময়েই বেসরকারি স্কুলগুলির একটি ধারণা আছে যে, তারা নিজেদের মতো করে পড়ুয়াদের ভর্তি নিতে পারে। কিন্তু আদতে সরকারি, বেসরকারি থেকে শুরু করে মাদ্রাসা ও যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার অধিকার আইন প্রযোজ্য। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘একা মা হওয়ার কারণে যদি কোনও শিশুকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে অস্বীকার করেন, তা হলে অভিভাবক সংশ্লিষ্ট স্কুলের বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে স্কুলের স্বীকৃতি বাতিল হতে পারে।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে বলেন, ‘‘মা একা অভিভাবক হওয়ায় যদি শিশুকে কোনও স্কুল ভর্তি নিতে অস্বীকার করে, তা কখনওই মেনে নেওয়া হবে না। আইনত এটা করাই যায় না। শিশুকে ভর্তি না নেওয়ার কারণ আমরা অবশ্যই জানতে চাইব।’’

প্রসঙ্গত, চলচ্চিত্রকার অনিন্দিতা সর্বাধিকারী কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অনিন্দিতা আইভিএফ পদ্ধতিতে মা হয়েছেন। সেই কারণে তাঁর সন্তানকে শহরের একাধিক স্কুল ভর্তি নিতে অস্বীকার করেছে বলে অনিন্দিতা জানাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি লড়াইটা ছাড়ছি না। এটা এখন শুধুই আমার লড়াই নেই বলে মনে হয়। কারণ, সুপ্ত সন্তান-বাসনা অনেকেরই আছে। এ বার তাঁরা সাহস করে এগিয়ে আসছেন।’’

কমিশনে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা ও তার বয়ানও সেটাই বলছে। দেরিতে হলেও একা মায়েদের স্বীকৃতির লড়াই ক্রমশ গতি পাচ্ছে!

 

সূত্র: আনন্দবাজর


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027599334716797