স্কুলের চারপাশে ঘুরছে যেসব বুনো জানোয়ার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

"আমাদের ক্যামেরা ট্র্যাপে এত বাঘের ছবি ধরা পড়তে দেখে আমি তো বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একবার দুইবার না, আমরা ১৬বার বাঘের উপস্থিতির চিত্র পেয়েছি!" বলছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বন্যপ্রাণী বিষয়ক বায়োলজিস্ট ড. স্টেফানি শাটলার। 

মানব বসতির কাছাকাছি কী ধরণের বুনো জন্তু জানোয়ার বাস করে, অর্থাৎ সাধারণত যাদের আমরা দিনের বেলায় বা আলোতে দেখতে পাই না তা জানতে ড. স্টেফানি ভারত, কেনিয়া, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি স্কুলের চারপাশে ক্যামেরা ট্র্যাপ পদ্ধতি স্থাপন করেন। জঙ্গলের বন্যপ্রাণী গণণার কাজে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। 

গ্রাউন্ডহগ নামের ইদুর আকৃতির এই প্রাণীর অন্য নাম উডচাক ড. স্টেফানি স্কুলের বাচ্চাদের শিখিয়ে দেন কীভাবে এই ক্যামেরা চালাতে হয়। 

"একদিন একজন শিক্ষক বললেন যে, বাচ্চারা ক্যামেরা ট্র্যাপ পরীক্ষা করে দেখে খুবই উত্তেজিত, এবং তারা ক্যামেরায় ধরা পড়া প্রাণীগুলোকে দেখে বিস্ময়ে চিৎকার করে ওঠে প্রতিবার।"

নর্থ ক্যারোলাইনা মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল সায়েন্স এবং নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে চালানো এই গবেষণায় এ পর্যন্ত সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি ছবি তোলা হয়েছে। মিলেছে অবিশ্বাস্য ছবি আর ফলাফলও।

"ভারতে আমরা দেখেছি, বাঘেরা নিয়মিত স্কুল প্রাঙ্গনে ঘোরাফেরা করে। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে আমরা অন্তত ছয়টি বাঘকে চিহ্নিত করেছি। ন্যাশনাল পার্কে করা আমাদের প্রাপ্ত ফলাফল যখন আমরা অন্য সংরক্ষিত এলাকায় বসানো ক্যামেরার ছবির সঙ্গে মিলিয়েছি, আমরা সেখানে আরো বেশি সংখ্যক বাঘের ছবি পেয়েছি।" 

বাঘ সাধারণত নিজের এলাকায় থাকে এবং সে একা থাকতেই ভালোবাসে। ভারতের বাঘ অভয়াশ্রমগুলোতে এই মূহুর্তে ২০টির কম বাঘ আছে। ড. স্টেফানি ভারতের পেনচ ন্যাশনাল পার্কের বাইরে একটি বড় বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্রে ক্যামেরা বসিয়েছিলেন।

তবে গবেষকেরা এখনো এটা বুঝতে পারেননি যে, বাঘেরা কেন সংরক্ষণ কেন্দ্রের বাইরে যায়। "আমরা জানি না বাঘেরা কেন স্কুলে ঘুরতে আসে। তবে যেহেতু এখানে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে, সেকারণে হয়ত তারা জঙ্গলের ছোট রাস্তা ধরে নতুন জায়গার খোঁজে স্কুলে ঢুকে পড়ে।" ড. স্টেফানি বলছেন। 

এই গবেষণা প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে সব মিলিয়ে চারটি দেশের মোট ২৮টি স্কুল অংশ নিয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের কিছু মৌলিক বিষয়, যেমন ক্যামেরা কিভাবে চালাতে হয়, কিভাবে ব্যাটারি বদলাতে হয় এবং কিভাবে ক্যামেরার ডেটা ট্রান্সফার করতে হয়।

প্রতি তিন সপ্তাহে ক্যামেরার অবস্থান বদলে দেয়া হতো। শিক্ষার্থীরা ক্যামেরাগুলোকে স্কুলের ভেতরেই বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে সেট করতো। মাঝে মাঝে কখনো স্কুল এলাকার আশেপাশেও বসানো হত ক্যামেরা। সেরা ছবিগুলোর বেশিরভাগই এসেছে স্কুলের খেলার মাঠে বসানো ক্যামেরাগুলো থেকে।

মেক্সিকোতে ক্যামেরা ট্র্যাপে একটি বনবিড়ালের ছবি পাওয়া যায়, যা পরবর্তী সময়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিতর্ক উস্কে দেয় বনবিড়াল কিভাবে কম্যুনিটির কাচে লাগে।

দেখা যায়, বনবিড়ালের কারণে ফসল মাড়ায় যেসব হরিন তারা কাছে কাছে ঘেষে না। অ্যামেরিকার ২৮টি দেই বনবিড়াল দেখা যায়, যদিও বেশির ভাগ জায়গায় তাদের সংখ্যা খুব দ্রুত কমছে। মেক্সিকোতে স্থানীয় কৃষকেরা জানতোই না কাছেপিঠে বনবিড়াল থাকে।

ক্যামেরা ট্র্যাপে মোট ৮৩টি স্তন্যপায়ী প্রাণীর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এর মধ্যে পাঁচটি বিপদাপন্ন প্রাণী, আর সাতটি সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে অনেকদিন ধরে। "কেনিয়াতে বিভিন্ন স্কুলে স্তন্যপায়ী প্রাণীর সংখ্যায় তফাৎ ছিল।

বন্যপ্রাণী বিষয়ক বেশিরভাগ গবেষক প্রান্তিক এলাকাকে নিজেদের গবেষণার জন্য বেছে নেন। কিন্তু বনাঞ্চল কমে যাওয়া এবং মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য এখন প্রায়শই বন্যপ্রানী লোকালয়ে চলে আসে। 

এই গবেষণার লক্ষ্য ছিল বর্তমান পরিস্থিতিতে কিভাবে প্রানীকূলের সঙ্গে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারে তার একটা উপায় খুঁজে বের করা। 

এমন আরো অনেক প্রাণী দেখা গেছে, যাদের অস্তিত্ব রয়েছে বলেও ঠিক নিশ্চিত ছিলেন না গবেষকেরাও। এখন তারা বলছেন স্থানীয়দের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিলে লোকালয়ে ঢুকে পড়া প্রাণী মানুষের হাতে মারা পড়বে না। সেই সঙ্গে বেঁচে যাবে অনেক বিপন্ন প্রাণী।

সূত্র: বিবিসি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026290416717529