স্কুলের নাম বিভ্রাট, নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে পারল না তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মোসা. মাহমুদা সুলতানা। ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার্থী। এবার ছিল তার চাকরি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের শেষ পরীক্ষা। যানজটের কথা মাথায় নিয়ে বাসা থেকে একটু সময় নিয়েই বের হয়েছিলেন তিনি। অ্যাডমিট কার্ড অনুযায়ী মাহমুদার পরীক্ষা কেন্দ্র পল্লবীর মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ। পুরো পল্লবী তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা কেন্দ্র খুঁজে হয়রান মাহমুদা। সকাল ৯টা ৩০ মিনিট, তখনও মাহমুদা পল্লবীর মিরপুর ল’ কলেজের সামনে। ঘড়ির কাঁটা যেন দ্রুত ঘুরছে।

অনেকের কাছে জিজ্ঞেস করছেন, কেউ বলতে পারছে না মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কোথায়? স্থানীয় এক পথচারীর তাকে জানান, পল্লবীতে মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। তবে এখান থেকে ১০ মিনিট সামনে গেলে মিরপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (বালকশাখা) ও বালিকা শাখার দুটি স্কুল আছে। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে দৌড়ে যান মিরপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বালক শাখায়। অ্যাডমিট কার্ডে দেয়া পরীক্ষা কেন্দ্রের নাম অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামের মিল নেই। এরপর ওখান থেকে ১০টার সময় চলে আসেন মিরপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (বালক শাখা) আসেন। এই প্রতিষ্ঠানে সঙ্গেও মিল নেই অ্যাডমিট কার্ডের দেয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামের। তবু স্কুলের সামনে সাঁটানো সিট প্লানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন অ্যাডমিট কার্ড। পরীক্ষার রোল অনুযায়ী পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত কক্ষ নম্বর। সিট খোঁজতে পাঁচ মিনিট লেট হয় তার। দ্রুত প্রবেশ মুখের গেটের সামনে গিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ ও দারোয়ানকে গেট খুলতে বলেন মাহমুদা। কিন্তু কোনো সাড়া নেই তাদের। তার মতো আরও অনেক পরীক্ষার্থীই গেট খোলার জন্য নানাভাবে আকুতি মিনুতি করছেন। গেটে জোরে জোরে শব্দ করছেন।

কিছুক্ষণ পরে গেটের ফাঁক দিয়ে দায়িত্বরত এক পুলিশ জানায়, গেট খোলা যাবে না। দেরী করে আসছেন কেন? আপনাদের পরীক্ষা দেয়ার দরকার নেই। বাসায় চলে যান।

পরীক্ষা দিতে না পেরে পুরো ১ ঘণ্টা সময় তার মতো অনেকেই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আরও যারা নিবন্ধন পরিক্ষায় অংশ নিতে পারেনি, এরা হলেন- লাকী আক্তার (রোল-৩০৪০১৯৫৪৬), কাজী মিরাজ হোসেন (রোল-৩০৪০১৯১৬৫), ইসরাত জাহান (রোল-৩০৪০১৯৮৪০), হীরা বেগম (রোল-৩০৪০১৯৮৯২),  আয়েশা আক্তার (রোল-৩০৪০১৯৯১৭), আজিজুন নাহার (রোল-৩০৪০২০৮৫৩), তানজিলা আক্তার (রোল-৩০৪০১৯৮৭০), পলাশ ও তৌহিদা জাহান।

তারা জানান, অ্যাডমিট কার্ডের দেয়া নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পেতে তাদের ৫-১০ মিনিট দেরি হয়। গেটম্যান ও পুলিশদের অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু কেউ গেট খুলেনি। এদের একজন তানজিলা আক্তার। তিনি জানান, সাভার থেকে খুব সকালেই আমি পরীক্ষা দেয়ার জন্য পল্লবীতে আসি। অ্যাডমিট কার্ডের দেয়া নামের পরীক্ষা কেন্দ্র কোথাও না পেয়ে চলে যাই মিরপুর বাংলা কলেজে। ওখানে গিয়ে সিট প্লানে রোল না থাকায়, কথা বলি গেটে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি জানান, সম্ভবত পল্লবীর মিরপুর বাংলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আপনার সিট পড়েছে। পরে তার কথা মতো দ্রুত চলে আসি ওই প্রতিষ্ঠানে। কেন্দ্রের সামনে টানানো সিট প্লানে দেখতে পাই নিজের রোল নম্বর। এরই মধ্যে ৫-৭ মিনিট দেরি হয়ে যায়। গেট আটকানো। গেট খুলতে বললেও তারা গেট খোলে নেই।

পলাশ নামে অপর এক পরীক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রের নামের ভুলের কারণে আমাদের একটু দেরি হয়েছে। এ কারণে গেটে দায়িত্বরতরা আমাদের ঢুকতে দেয়নি। আমাদের ঢুকতে না দিয়ে তারা আমাদের সঙ্গে অবিচার করেছে। আমরা এর বিচার চাই।

পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র সচিব ও মিরপুর বাংলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশ নবীর কাছে কয়েকজন অভিযোগও করেন। এ ব্যাপারে তিনি  বলেন, গেটে দায়িত্বরতরা আমাকে জানায়নি। তা ছাড়া দেরিতে আসলে সাধারণত গেট খোলা হয় না। এর আগেও বেশ কয়েকবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডের নামের সঙ্গে অ্যাডমিট কার্ডের নামের মিল না থাকায় চাকরি প্রার্থী পরীক্ষার্থীরা বেশ কয়েকজন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। নেমপ্লেট পরিবর্তনের জন্য বোর্ডের অনুমতি লাগে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমরা নাম পরিবর্তনের জন্য বোর্ডে একটি আবেদন জমা দেব। বোর্ড অনুমতি দিলেই নাম পরিবর্তন করা হবে।

এ ব্যাপারে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হোসেন বলেন, কেউ দেরি করে আসলে ওই পরীক্ষার্থীর ক্ষতি। ৫-১০ মিনিট দেরি হওয়ার কারণে তাদেরকে ঢুকতে না দিয়ে কাজটি ঠিক করেননি। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040159225463867