স্কুলের পাশে জুয়ার আসর, পাঠদান ব্যাহত

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি |

সরাইল অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারপাশে চলছে জুয়া ও মাদকের দাপট। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পাঠদান। প্রতিবাদ করলেই হেনস্তা হচ্ছেন শিক্ষকরা। আর শিক্ষার্থীদের হতে হচ্ছে নাজেহাল। থানা থেকে মাত্র ১০-১৫ গজ দূরে নিত্যদিনের এসব অপকর্মের কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। দুই বছর ধরে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় চিৎকার করছেন প্রধান শিক্ষক। সবশেষ গত ৯ই সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত এ বিদ্যালয়টি ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন শিক্ষক রয়েছেন। ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী ৬১০ জন। পাঠদানে নেই কোনো সমস্যা। কিন্তু সবচেয়ে বড় ও প্রকট সমস্যা হচ্ছে বিদ্যালয়ের চারদিকে দেদার চলছে জুয়া ও মাদক সেবন। বিদ্যালয় সংলগ্ন খেলার মাঠে সকাল ১০টা থেকে দুপুর কখনো বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলে খেলার ছলে জুয়া। ক্রিকেটের বলে বলে জুয়া। পাল্লা দিয়ে চলছে ফুটবলেও জুয়া। প্রাক্তন ছাত্রাবাসে ও বিদ্যালয়ের মার্কেটের ছাদেও চলে জুয়া। সেইসঙ্গে হরেক রকমের মাদক সেবন। শিক্ষকরা বাধা দিলে আমলে নেননি জুয়াড়ি ও মাদকসেবীরা। উল্টো তাদের নানা কটূক্তির মাধ্যমে হেনস্তা করা হয়। মাদক জুয়ায় বাধা দেয়ার দায়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এখানেই শেষ নয়। মাঠের প্রধান ফটকের তালা ভাঙছে নিয়মিত। ভাঙছে জানালা। এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের ড্রেনে এসে আটকে যাচ্ছে অত্র এলাকার সকল ময়লা। গত দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে এসব বিষয় আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রকাশ্যে বলে প্রতিকার চেয়েছেন। সরাইল থানায় ৩টি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি আদৌ।

গতকাল সকাল ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায় মাঠে চলছে এক শ্রেণির ছেলেদের ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা। শব্দ ছাড়াই চলছে জুয়াও। চোখ ও হাতের ইশারায় মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। মাঠের পশ্চিম পাশের ছাত্রাবাসে চলছে দেদার জুয়া। তাস পড়ছে। টাকা উড়ছে। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়েই লাফিয়ে পালিয়ে গেছে সকলেই। বিদ্যালয়ের পূর্ব-উত্তর পাশে মার্কেটের ছাদের ওপরও চলছে জুয়া। ছবি তুলতে গেলেই তারা দ্রুত সটকে পড়েন।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিক ও একাধিক সহকারী শিক্ষক বলেন, আমাদের চারদিকের জুয়া ও মাদক সেবনের কাছে সবাই অসহায়। একদিকে চলছে পাঠদান। সংলগ্ন মাঠেই চলছে ফুটবল ও ক্রিকেট জুয়া। চিৎকার চেঁচামেচি ও লাফালাফি। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ চলে যাচ্ছে মাঠের জুয়ায়। শ্রেণিকক্ষে বসেই তারা উপভোগ করছেন ৩-৪টি স্থানের জুয়া ও মাদক সেবনের দৃশ্য। এভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা সভায় শুধু বলেই যাচ্ছি। গত সভায় লিখিত অভিযোগ করেছি। ব্যবস্থা বা প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

ওদিকে গতকাল সরজমিনে ঘুরে আসার দুই ঘণ্টা পরেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রাবাস থেকে দুই জুয়াড়িকে গ্রেফতার করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নুরুল হক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026330947875977