স্টামফোর্ড, নর্দান, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি : স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় শম্বুকগতি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও এ আইন মানছে না বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে ইউজিসির চাপে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তুললেও, সেখানে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করছে না। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক কার্যক্রম চলছে বছরের পর বছর। আজ মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত অস্থায়ী ক্যাম্পাসনির্ভর বেসরকারি এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে চার পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের শেষ পর্ব থেকে এ তথ্য জানান যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ সুজন। 

স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম স্থানান্তরে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দফায় দফায় সময় বেঁধে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম স্থানান্তর নিয়ে ইউজিসির সর্বশেষ আলটিমেটামটি শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। এরপর পেরিয়েছে এক বছরেরও বেশি সময়। অথচ এখনো শম্বুকগতিতে চলছে স্টামফোর্ড, নর্দান, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম স্থানান্তরের প্রক্রিয়া।

স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন পায় ২০০২ সালে। সে হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা ও সেখানে সব ধরনের কার্যক্রম স্থানান্তরের নির্ধারিত সময় পার হয়েছে বহু বছর আগেই। এমনকি ইউজিসির আলটিমেটাম পেরোনোর পরও তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইউজিসির এক প্রতিবেদনেও স্টামফোর্ডের এ ধীরগতির কথা উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি নেই।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও এর সত্যতা মেলে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে অর্থাৎ গত মাসে রাজধানীর মান্ডা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য তিন বিঘা জমি কেনা হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে আরো ছয় বিঘা জমি কেনার বায়না চুক্তি। অর্থাৎ ইউজিসির আলটিমেটামের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা দূরের কথা, এজন্য শুধু জমি কিনতেই বিশ্ববিদ্যালয়টির সময় লেগে গেছে অতিরিক্ত আরো এক বছর।

জানতে চাইলে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা জানান স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক আলী নকী। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের শুরুর দিকে স্থায়ী ক্যাম্পাসের ধারণাটি ছিল না। তখন বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই ভাড়া ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তী সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর তাদের জন্য সহজ ছিল। কিন্তু আমরা শুরু থেকেই যতগুলো ভবন কিংবা ফ্লোরে কার্যক্রম শুরু করি, তার সবই ছিল নিজস্ব। এজন্য আমাদের জন্য স্থানান্তর প্রক্রিয়াটি সহজ ছিল না।

বর্তমানে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এক বছর হলো আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। দায়িত্বের শুরু থেকেই সব সভায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে আমাদের জমি কেনা হয়ে গেছে। নির্মাণকাজ শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব আমরা স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করব।’

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ: সার্বিক কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরে ব্যর্থ আরেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়টির রাজধানীর গ্রিন রোডে দুটি ও উত্তরায় দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। এর মধ্যে একটি স্থায়ী ও বাকি তিনটি অস্থায়ী ক্যাম্পাস।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থায়ী ক্যাম্পাসে শুধু ল্যাব ক্লাসগুলো নেয়া হয়। এছাড়া ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী ক্যাম্পাসগুলোয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে ভর্তি হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।

অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি স্বীকার করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি করেছি, তারা শহরের ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়েছে। ভর্তির বিষয়টি এক ধরনের চুক্তি। তারা এখানে ভর্তি হয়ে উত্তরায় ক্লাস করতে যাবে কেন? আর মেট্রোরেলের কাজের কারণে আমাদের উত্তরার ক্যাম্পাসের সড়কগুলোর খুবই খারাপ অবস্থা। এসব বাস্তবতাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা কী চায়, সেদিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন রয়েছে।

নর্দান ইউনিভার্সিটি: বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম স্থানান্তর হয়েছে আংশিক। পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম স্থানান্তরের দিক থেকে এখনো বেশ পিছিয়ে নর্দান ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ১১টি বিভাগের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে নেয়া হয়েছে মাত্র তিনটি বিভাগ। সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির সিংহভাগ কার্যক্রমই এখনো অস্থায়ী ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক। যদিও এরই মধ্যে অর্ধেক শিক্ষার্থীকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিভাগের সংখ্যা কম হলেও বড় বিভাগগুলোই শুরুতে স্থানান্তর হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বমোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকই এ তিন বিভাগের।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস করা হয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়। এয়ারপোর্টের পাশেই আশকোনা এলাকায় সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে ক্যাম্পাস ও আরো তিন বিঘা জমি কেনা হয়েছে খেলার মাঠের জন্য। এরই মধ্যে তিনতলা একটি ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। আমাদের নবীনবরণসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানও সেখানে করা হচ্ছে। যদি বিভাগের সংখ্যা বিবেচনায় নেন, তাহলে মনে হবে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি কম। আমাদের বড় বিভাগগুলোই সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ওই এলাকার জমি নিচু হওয়ায় গত বছর অতিবৃষ্টির কারণে নির্মাণকাজে জটিলতা তৈরি হয়। এ কারণে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব আমরা সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে নিয়ে যাব।

একইভাবে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সাউথইস্ট, প্রাইমএশিয়া, বাংলাদেশ, আশা, রয়েল, ভিক্টোরিয়া, সাউথ এশিয়া, ইবাইস, স্টেট ও চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়েরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি নেই বলে ইউজিসির প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032720565795898