স্বাক্ষর জাল করে টর্চার সেল না থাকার বিবৃতি

ঢাবি প্রতিনিধি |

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের টর্চারে মারা যাওয়ার পর থেকে আলোচনায় আসে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন এবং হলে হলে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের ‘টর্চার সেল’র বিষয়টি। ইতোমধ্যে অনুসন্ধান করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়েও টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। এসব গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ঢাবির হলগুলোতে ‘টর্চার সেল’ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে টর্চার সেলের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর বিপাকে পড়ে যায় ছাত্রলীগ। দায় এড়ানোর জন্য ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায় আবাসিক হলে ‘টর্চার সেল’ নেই এমন বিবৃতি দিয়েছে ঢাবির সাতটি হল সংসদ। এসব হলের ছাত্র প্রতিনিধিদের সবাই ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন অথবা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হল সংসদের বিবৃতিতে অনেকের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

গত সোমবার শীর্ষস্থানীয় একটি জাতীয় দৈনিকে ‘অর্ধশত টর্চার সেল ঢাবির ১৩ হলে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। যেখানে হলের বিভিন্ন কক্ষ ও স্থান কীভাবে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হয় তা উল্লেখ করা হয়। এদিন দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে বসেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। এ সময় শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে হল সংসদের ভিপি-জিএসদের ‘টর্চার সেল’ না থাকার বিষয়ে বিবৃতি দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। তিনটি হল সংসদের চারজন নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধি এবং দুইজন ছাত্রলীগ নেতা এমন নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ছাত্রলীগের নির্দেশনার পর বিভিন্ন হল এ সংক্রান্ত বিবৃতি দিতে শুরু করে। এসব বিবৃতিতে ‘টর্চার সেল’ নেই উল্লেখ করা হলেও ‘গেস্টরুম’-এ শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। তবে গত সাত বছরে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের যে হিসেব দেয়া হয়েছে তা অস্বীকার করেনি বিবৃতিদাতারা। পাশাপাশি কেউ কোন নির্যাতনের শিকার হলে হল প্রশাসন ও হল সংসদকে অবহিত করার আহ্বানও ছিল সেসব বিবৃতিতে। এসব বিবৃতিতে যাদের স্বাক্ষর রয়েছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থী নির্যাতন এবং ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকা এবং হলের ক্যান্টিনে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। গত সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সাতটি হল সংসদের বিবৃতি হাতে এসেছে। এসব বিবৃতিতে আবাসিক হলে ‘টর্চার সেল’ নেই উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এসব বিবৃতিতে যাদের স্বাক্ষর রয়েছে তাদের অনেকেই পূজার ছুটিতে বাড়িতে অবস্থান করছেন, যারা বিবৃতির বিষয়ে কিছুই জানেন না। সূর্যসেন হল সংসদের বহিরাঙ্গন ও অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক, বিজয় একাত্তর হল সংসদের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক, জসিম উদদীন হল সংসদের চারজন সদস্যসহ অনেকের স্বাক্ষর জাল করে হল সংসদে বিবৃতি দেয়া হয়েছে।

সূর্যসেন হল সংসদের বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক মো. জুলহাস সুজন বলেন, আমি গত দশদিন ধরে বাড়িতে। টর্চার সেল সম্পর্কিত হল সংসদের কোন বিবৃতি সম্পর্কে জানেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কিত কোন বিবৃতি সম্পর্কে আমি জানি না। আর আমার স্বাক্ষর কে দিয়েছে সেটা সম্পর্কেও অবগত নই। একই হল সংসদের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক সাব্বির হাসান সৌরভ বলেন, আমি গত ৭ অক্টোবর বাড়িতে এসেছি। এখনও বাড়িতে অবস্থান করছি।

এ বিষয়ে সূর্যসেন হল সংসদের ভিপি মারিয়াম জামান খান সোহান বলেন, এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। হল সংসদের সব সম্পাদক এবং সদস্য থেকে স্বাক্ষর সাধারণত জিএস নিয়ে থাকে। তবে বিবৃতিটি তড়িঘড়ি করে দেয়ার কারণে স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজটি হলের পিয়নদের দেয়া হয়েছে। তারাই এটি সংগ্রহ করেছে। তবে আমি জানি হল সংসদের সবাই এ বিষয়ে একমত। কেউ ভিন্নমত পোষণ করার কথা না।

বিজয় একাত্তর হল সংসদের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক মো. সুজন শেখ বলেন, পূজার বন্ধে বাড়িতে আসার পর আমার আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই গত ১০ দিন যাবৎ হল সংসদের কোন কর্মকা- সম্পর্কে আমার জানা নেই। এর মধ্যে কোন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকলেও এ ব্যাপারে আমি জানি না। স্বাক্ষরের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। হল সংসদের কেউ হয়তো দিয়ে থাকবে।

জসিম উদদীন হল সংসদের সদস্য আহসানুল হক শিমুলকে কোথায় আছেন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, পূজোর ছুটিতে আমি বাড়ি এসেছি। স্বাক্ষরের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়ে মুঠোফোনে একাধিক কল দেয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, এ অভিযোগ মিথ্যা। আমরা হল সংসদ বা ডাকসুর কেউ না। আমরা হল সংসদকে বিবৃতি দিতে কোন নির্দেশনা দেইনি। হল সংসদগুলো তাদের মতো করেই বিবৃতি দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির মুঠোফোনে কল দিলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026919841766357