স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জরুরি পুনঃগঠনের আহ্বান আইডিইবির

নিজস্ব প্রতিবেদক |

স্বাধীনতাত্তোর দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনঃগঠনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন "একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়তো হলে চাই একটি স্বাস্থ্য্বান জাতি"। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে জাতির পিতার এই দর্শন বাস্তবায়নে অতীতের সরকারসমূহ কোন পরিকল্পনাই গ্রহণ করেন নাই। বরং স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের নামে দেশে শত সহস্র কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। ফলে বর্তমানে করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকারকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে সম্মুখে রেখে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামগ্রিক পুনঃগঠনের আহ্বান জানিয়েছে আইডিইবি।

করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করে প্রাণহানি রোধে সরকার যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তার সফল বাস্তবায়নে দেশের সকল হাসপাতালসমূহের মেডিকেল ইকুপইমেন্ট তথা ভেন্টিলেটর ও অন্যান্য ইকুইপমেন্ট সচল রাখতে জরুরী ভিত্তিতে ডিপ্লোমা ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)।

আইডিইবির সভাপতি এ কে এম এ হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামসুর রহমানের যৌথ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসকদের ৫০ ভাগের অধিক সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ও মেডিকেল টেস্ট। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়।

অথচ সরকারের ৬১০টি হাসপাতালের বিপরীতে যন্ত্রপাতি সুষ্ঠু সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষন ও মেরামতের জন্য প্রকৌশলী রয়েছে মাত্র ১৯জন। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকায় কেনা মেডিকেল ইকুপমেন্টসমূহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অচলঅবস্থায় রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ডাক্তারগণের আন্তরিক প্রয়াশ থাকা সত্ত্বেও যথাযথ চিকিৎসা প্রদান ব্যহত হচ্ছে। আমাদের চিকিৎসক সমাজের বিবৃতিতে বলা হয় একটি দেশপ্রেম বিবর্জিত কতিপয় উর্দ্ধতন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ি মহলের ষড়যন্ত্রের ফলে ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের আর নিয়োগ দেয়া হয় নাই।

যার ফলে অতীতে ৯৫ জনবল সম্বলিত সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করার উদ্দেশ্যে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনন্টেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) সৃষ্টি করা হলেও ইতোমধ্যে ঐ জনবলের অধিকাংশ অবসরে চলে যায়। বর্তমানে মাত্র ১৯ জন প্রকৌশলী দিয়ে এ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।

সরকারি ৬১০টি হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যা লাঘবে অতি প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং কিছু হাসপাতালে এই মেশিন থাকলেও অধিকাংশই নষ্ট। অথচ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং উত্তীর্ণ প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী বেকার দিনাতিপাত করলেও সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত নিমিউ অ্যান্ড টিসিতে প্রকৌশলী নিয়োগের ব্যাপারে কর্তপক্ষ কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঁচ-সাত হাজার ডাক্তার ও নার্স জরুরী ভিত্তিতে নিয়োগ দিচ্ছেন। যা অত্য ন্ত প্রশসংনীয়। কিন্তু এত জনবল নিয়োগ প্রদান করার পরও মেডিকেল ইকুইপমেন্টসমূহ সচল না থাকলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার লক্ষ্য ৫০ ভাগও অজর্ন হবে না।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইডিইবির নির্দেশনায় ইলেক্ট্রো মেডিকেল ডিপ্লোমা প্রকৌশলীগণ ৩১ সদস্য বিশিষ্ট স্বেচছাসেবক দল গঠন করে বিনা পারিশ্রমিকে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ভেন্টিলেটর এবং আইসিইউ যন্ত্রপাতি মেরামত করেছেন, যা অব্যাহর রয়েছে। তাদের এ দেশপ্রেমমূলক কাজ অবশ্য্ই প্রশংসার দাবি রাখে। জাতির এ ক্রান্তিকালে তাদের এ ধরনের মহতী উদ্যোগ সরকার যথাযথ মূল্যা্য়ন করবে বলে আইডিইবি প্রত্যারশা করছে।

নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, এসডিজির লক্ষ্যক অর্জনে ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব চ্যালেঞ্জ মোবাকেলায় প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক নির্দেশনায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করছে। যা অর্জনে অনেক চ্যা লেঞ্জ রয়েছে। ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি না হওয়া অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ।

সফলতা ও চ্যা লেঞ্জ মোকাবেলায় অতিদ্রুত নতুন করে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনন্টেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) গঠন করে আন্তর্জাতিক কনসেপ্ট অনুযায়ী প্রতি ১০ জন ডাক্তারের বিপরীতে ১ জন ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার অথবা অন্ততঃপক্ষে প্রতি হাসপাতালে ৩-৪ জন ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ প্রদানের জন্য আইডিইবি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যে মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিনীত আহ্বান জানাচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002493143081665