স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি : ‘সিন্ডিকেটের হাত কত লম্বা?’

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

জেকেজি এবং রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারির পটভূমিতে স্বাস্থ্যখাতে যখন একের পর এক দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, তখন সরকার টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতি দূর করার কথা বলছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ পাওয়ায় চুনোপুটি কয়েকজনকে ধরা হয়েছে। কিন্তু সংকটের গভীরে গিয়ে প্রভাবশালী স্বার্থন্বেষী মহল বা রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।

স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি-অনিয়মের গভীরে যাওয়া আসলে কতটা চ্যালেঞ্জের, এবং সিন্ডিকেট বা স্বার্থন্বেষী মহলের প্রভাব থেকে স্বাস্থ্যখাতকে মুক্ত করা কী আদৌ সম্ভব-এই খাতের পর্যবেক্ষকদের অনেকেই তুলেছেন এসব প্রশ্ন।

সিন্ডিকেটের হাত কত লম্বা? 

স্বার্থন্বেষী মহল বা সিন্ডিকেটের হাত কী সরকারের হাতের চেয়েও লম্বা- এমন আলোচনাও এখন চলছে।

টিআইবির ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা বেশ কঠিন। তবে একেবারে অসম্ভব বিষয় নয় বলেও মনে করেন তিনি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'গভীরে গিয়ে যারা এর সার্বিক প্রক্রিয়ার মধ্যে মূল ভূমিকাগুলো পালন করে থাকে, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা বা একটা প্রতিরোধমূলক জায়গায় নিয়ে আসা- এটি খুবই কঠিন কাজ এবং অনেক সময় অসম্ভবও মনে হয়। কিন্তু যদি আইনের প্রয়োগ হতো বা নীতিমালার প্রয়োগ হতো তাহলে কিন্তু এটি  খুবই সম্ভব।'

টিআইবির নির্বাহী আরো বলেন, 'দুঃখের বিষয় হলো, যে প্রতিষ্ঠানগুলো বা যে কর্তৃপক্ষের ওপর দায়িত্ব তাঁরা কিন্তু এক ধরনের সীমারেখা নির্ধারণ করে বসে আছেন যে এই সীমারেখার উর্ধ্বে আর যাওয়া যাবে না, তাহলে হাত পুড়ে যাবে। যার ফলে টানাটানি হবে তথাকথিত কিছু চুনোপুটিদের নিয়ে। এবং রুই-কাতলারা ঠিকই বাইরে থেকে যাবে।'

সরকারের টাস্কফোর্স 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ যখন পদত্যাগ করেন, তখন গত বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। নানা অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, পরিস্থিতি করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'পরীক্ষায় কত নম্বর পেলেন, এটি নির্ভর করে আপনি পরীক্ষা কেমন দিয়েছেন। আমরা মনে করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভালো নম্বর পেয়েছে। নম্বরটা কি- যে আমাদের মৃত্যুর হার দেড় পার্সেন্ট। এটি হলো সবচেয়ে বড় নম্বর। যেটি  আমেরিকায়ও ছয় শতাংশ, ইউরোপে ১০ শতাংশ। তবে যেখানে যেখানে পরিবর্তন প্রয়োজন, সে বিষয়গুলো আমরা অবশ্যই দেখব। আমরা চাই যে, এখানে সুষ্ঠু পরিচালনা হোক।'

তবে মন্ত্রী নিজে পদত্যাগ করবেন কিনা-সাংবাদিকদের সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, 'একটি টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।' কিন্তু সংকট কতটা গভীরে-তা বের করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা আছে কিনা- তাতে সন্দেহ রযেছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা বলেন, সংকটের শেকড়টি বের করা প্রয়োজন।

অধ্যাপক নাসরিন বলেন, 'খুবই গভীর মনে হয়। যদি সেটি  গভীরে না হয়, তাহলে একের পর এক দুর্নীতি হতে পারে না। যেমন, আমরা জেকেজি বা রিজেন্টের ঘটনা দেখেছি। এরপর সাহাবুদ্দিন হাসপাতালের ঘটনা দেখলাম। একের পর এক হয়েই যাচ্ছে। এর রুটটা বের করা দরকার। সংবেদনশীল এই খাতে দুর্নীতি চলতে থাকলে শেষপর্যন্ত জনগণকেই কিন্তু ভোগান্তি পোহাতে হয়।'

দুর্নীতির গভীরতা এবং উৎস: কারা দায়ী? 

স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি বা অনিয়ম নতুন কিছু নয়। এখন করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে কিছু ঘটনা প্রকাশ হওয়ায় এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি এবং এই খাতের পর্যবেক্ষকদের অনেকেই এমন বক্তব্য দিচ্ছেন।

কিন্তু কীভাবে বছরের পর বছর ধরে সেখানে দুর্নীতি চলে, সেই প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগে পরিচালকের কাজ করার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে টাকা বানানোর টার্গেট নিয়েই চক্র গড়ে ওঠে।

ডা. বে-নজীর বলেন, 'যে সেক্টরগুলোতে বেশি কাজ হয়, তার মধ্যে হেলথ সেক্টর অন্যতম। সুতরাং এই জায়গাটাকে তারা টার্গেট করে যে এখান থেকে 'দে ক্যান আর্ন অ্যা্ লট' - এটা টার্গেট করে যারা আসে, তারা বড় বড় প্লেয়ার এবং তাদের নানা জায়গায় পরিচিতি আছে।'

ডা. বে-নজীর আরো বলেন, 'আমাদের ক্রয় সর্ম্পকিত পদ্ধতিতে দুর্বলতা আছে। আর যারা টার্গেট নিয়ে আসে, তারা খুব স্মার্ট। এদের সাথে আমাদের অধিদপ্তর বা আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ কেউ জড়িত হন। যে লোকগুলো বছরের পর বছর একই পদে থাকেন, তারা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এই দু'টো মিলিয়ে করাপশনগুলো হচ্ছে।' 

সাবেক এই পরিচালক এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতিতে জড়িত থাকার যে কথা বলছেন, অনেকটা একই তথ্য এসেছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি'র গবেষণায়। সেখানে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যখাতের ঠিকাদার বা ব্যবসায়ী, একশ্রেণির আমলা এবং রাজনৈতিক প্রভাব-এই তিনটি পক্ষের সিন্ডিকেট সেখানে কর্মকাণ্ড চালায়।

টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড.  ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ক্ষমতার পরিবর্তন হলে সিণ্ডিকেটের লোক বদল হয়। কিন্তু একইভাবে দুর্নীতি চলতে থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'ক্ষমতার রদবদল কিছু না কিছু হয়। একই রাজনৈতিক দলের আমলে বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন ব্যক্তি ক্ষমতায় আসেন এবং প্রভাবশালী গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়। তাদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন অনিয়ম হয়। সেখানে একদিক থেকে প্রশাসনের এক শ্রেনির কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। আর ঠিকাদার বা সরবারহাকারী আছে, যাদের বানোয়াট বা বাস্তব পরিচয় থাকে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক মহলের সঙ্গে। এগুলোকেই পুঁজি করে চক্রজালের মতো কাজ করে। যেটিকে আমি ত্রিমুখী আঁতাত বলি।'

'বেনিফিশিয়ারির লিস্ট অনেক লম্বা' 

স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি বা অনিয়ম করে বেনিফিশিয়ারি বা লাভবান হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা অনেক লম্বা, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও অনেকেই তা মনে করেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রুহুল হক আওয়ামী লীগ সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতের ব্যবস্থাপনাতেই ত্রুটি আছে। একারণে কেনাকাটা এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনাসহ সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি থাকছে। তিনি মনে করেন, স্বাধীন একটা কমিশন গঠন করে স্বাস্থ্যখাতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

অধ্যাপক রুহুল হক বলেন, 'সার্কেলের মধ্যে বেনিফিশিয়ারির তালিকা অনেক লম্বা। এই তালিকার কিছু লোক পরিবর্তন হলেও বেনিফিশিয়ারিরা কোনো না কোনোভাবে থেকে যায়। সবাই শুধু মন্ত্রীকে জেলে দেয়। কিন্তু মন্ত্রীর হাত দিয়ে কোনো  কেনাকাটা হয় না, সব কেনাকাটা হয় মন্ত্রীর বাইরে। সুতরাং বেনিফিশিয়ারিরা কিন্তু পদ্ধতিটাকে পরিবর্তন করতে দেয় না।'

অধ্যাপক হক আরো বলেন, 'হাউ টু চেঞ্জ দিজ- এখানে দুর্নীতি বলুন, হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা বলুন, অপরিচ্ছন্ন হাসপাতালের কথা বলুন, আমাদের দুই মাস বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় সার্জারির সিরিয়াল পাওয়ার জন্য-এসব যাই বলুন না কেন, এগুলোর সমাধান করতে হলে আমাদের স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজাতে হবে।। সেজন্য একটি কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।'

বিভিন্ন সময়ই স্বাস্থ্যখাতে সংস্কারের বিষয় আলোচনায় এসেছে  দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে, এমন ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক সংস্কারের লিখিত সুপারিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে দিয়েছে কয়েক মাস আগে। কিন্তু সংস্কারের প্রশ্নে কোন পদক্ষেপ নেই।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, 'স্বাস্থ্যখাতে ব্যবস্থাপনা বা পদ্ধতির মধ্যেই দুর্নীতির উৎস রয়েছে। তারা গবেষণায় এমন চিত্র পেয়েছেন।' তিনি বলেন, 'আমরা এটি  নিয়ে কিছুটা গবেষণা করেছি। সেখানে কীভাবে কেনা হয়, কীভাবে হাসপাতাল ম্যানেজ করা হয়, কীভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহ করা হয়, চিকিৎসা সেবা কীভাবে দেওয়া হয়-এসব বিষয়ে আমাদের টিম দীর্ঘ সময় গবেষণা করেছে। এই গবেষণায় স্বাস্থ্যখাতের পদ্ধতির বিচার বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছি ওই পদ্ধতির মধ্যেই কিছু গোলমাল রয়ে গেছে।'

দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য হচ্ছে, পদ্ধতির সংস্কার ছাড়া কোনো দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, 'সেজন্য আমরা সংস্কারের কিছু সুপারিশ করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, আপনাদের পদ্ধতির মধ্যে দুর্নীতির উৎস হচ্ছে এগুলো। এগুলো বন্ধ করার জন্য আপনারা রিফর্ম করতে পারেন।সেগুলো যদি আমরা সবাই মিলে বাস্তবায়ন করতে পারতাম, তাহলে স্বাস্থ্যখাতে অর্থের অপচয় সেভাবে হতো না।'

জেকেজি হেলথকেয়ার এবং রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারিতে প্রতিষ্ঠান দু'টির মালিক মো. সাহেদ এবং ডা. সাবরিনা আরিফসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিদায় নিতে হয়েছে। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে এর পরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য ব্যয়ের বেশিরভাগই মৌখিক নির্দেশে হয়েছে। ফলে সেখানে দুর্নীতি বা অনিয়মের সুযোগ ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. শাহনাজ হুদা সুশাসনের জন্য কাজ করেন। তিনি মনে করেন, স্বাস্থ্যখাতে সংকটের গভীরে যাওয়া সম্ভব, কিন্তু কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে।

ড. শাহনাজ বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের একটা সিন্ডিকেট আছে। শুধু যাদের মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, মানুষকে খুশি করার জন্য তাদের শাস্তির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আসলে এর উৎসতো অনেক গভীরে।'

স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি: 'শাস্তির নজির নেই' 

স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি বা অনিয়মের ব্যাপারে কখনও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে-এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তরাও এমন প্রশ্নের জবাব মিলাতে পারছেন না।

করোনাভাইরাস সর্ম্পকিত সরকারের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ মনে করেন, কখনও কঠোর শাস্তি না হওয়ায় স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজরা বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে এবং এখন তার প্রকাশ ঘটেছে।

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ বলেন, 'দুর্নীতি যারা করছে, তারা ইচ্ছামতো করছে। কোনো শাস্তি হয় না, পার পেয়ে যাচ্ছে। সুতরাং তারা বেপোরোয়া হয়েছে। এখন দুর্নীতি করলে কোনো  অসুবিধা যদি না হয়, তাহলে তারাতো চালাতেই থাকবে। সেটাই হয়েছে। সেটি আগেও ছিল এবং এখনও আছে। সমস্যা হয়েছে, করোনাভাইরাস আসায় এটি উন্মোচিত হয়ে গেছে। এটুকুই পার্থক্য। আর কিছু নয়।'

এখন প্রকাশ হওয়া দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। এর আগে বিভিন্ন সময় হাসপাতালের পর্দা কিনতেই হাজার হাজার টাকা ব্যয় করাসহ নানা অভিযোগে ১১টি মামলা নিয়ে দুদক কাজ করছে।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি বন্ধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব নেই। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা থাকছে বলে তাঁর ধারণা।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, 'রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে বলে আমার মনে হয় না। আমার মনে হয়, আমরা যারা ইমপ্লিমেন্টেশনে আছি, তাদেরই সমস্যা। যেমন আপনি দেখেছেন যে মশারি-বালিশ এ সকল ক্রয়ে অনিয়ম। এগুলোতো প্রকল্পে ছিল। প্রকল্প তৈরি হয় কোথায়- অধিদপ্তরে, সেখান থেকে মন্ত্রণালয় তারপর প্ল্যানিঙসহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। সবাই কিন্তু তা দেখছেন। তাহলে এত চোখ এড়িয়ে কিভাবে বালিশের দাম এত নির্ধারিত হয়ে যায়। এখানেই সমস্যা।'

তবে সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞরাই বলেছেন, এখন স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং এখনই সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে তারা মনে করেন।

সংস্কারের পদক্ষেপ নেবে কে? 
সেখানে প্রধানমন্ত্রীকেই হস্তক্ষেপ করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। তাঁরা সেই অপেক্ষাতেই আছেন বলে মনে হয়েছে।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক বলেন, স্বাস্থ্যখাতে স্বার্থান্বেষীদের সিণ্ডিকেট ভেঙে দিয়ে পুরো এই খাতকে ঢেলে সাজানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজে পদক্ষেপ নেবেন-এমন আশায় তিনি রয়েছেন।

অধ্যাপক রুহুল হক বলেন, 'ব্যবস্থাপনার পরিবর্তনের কথা যা বলছি,তাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন, তিনি যদি কনভিন্সড হন যে আমি একটি নতুন ব্যবস্থাপনার কথা বলছি এবং আলোচনা করতে বলেন। তাহলে তা হবে।' একইসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি খুব আশাবাদী  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন প্রতিদিনই খুব কাছ থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দেখছেন। সুতরাং আশাবাদি যে পরিবর্তন আসবে। এটি আমার ধারণা।'

সরকারের একাধিক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী মনে করেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক দিক থেকেও বিবেচনা করলে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বড় ধরণের সংস্কার কার্যক্রম নে‌ওয়া প্রয়োজন। তবে শেষ পর্যন্ত এসব কথার কতটা বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ রয়েছে। 

সূত্র : বিবিসি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032260417938232