৬ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যাস্বীকারোক্তির পরও বিচার ঝুলে আছে ৮ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারে ঘুরতে যাওয়া ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার পর সাতটি শবে বরাত পার হলেও এখনও বিচার শেষ হয়নি আলোচিত এই হত্যা মামলার। রোববার (২১ এপ্রিল) সন্তান হারানোর সেই রাতের অষ্টম বার্ষিকী সামনে রেখে বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন নিহত কয়েকজনের বাবা-মা। তারা বলছেন, আসামিদের ১৪ জন হত্যাকাণ্ডে দোষ স্বীকার করার পরেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা না আসায় বিচার এগোচ্ছে না।

নিহত ইব্রাহীম খলিলের বাবা আবু তাহের আলী বলেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থায় স্বীকারোক্তি দেওয়ার পরও আসামিদের বিচার শেষ হয় না। এটা আমাদের দুভার্গ্য।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি শাকিলা জিয়াছমিন মিতু জানান, মামলায় অর্ধশতাধিক জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ দুই-একজনের সাক্ষ্য বাদ রয়ে গেছে। তারা আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসায় মামলার বিচার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ মামলায় ৫২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। শুধু তদন্ত সংশ্লিষ্ট দুজন পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিলেই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে। অনেকগুলো ধার্য তারিখে তারা সাক্ষ্য দিতে আসেননি।

নিহত কামরুজ্জামান কান্তর বাবা আব্দুল কাদের সুরুজ বলেন, দুই পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিলে মামলার বিচার শেষ হবে। তারা কবে আসবেন আদালতে জানি না।

ওই দুই কর্মকর্তা কারা জানতে চাইলে সহকারী পিপি মিতু বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ এবং সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সিরাজুল হক।

এ মামলায় সর্বশেষ সাক্ষ্যগ্রহণ হয় গত বছরের ১১ অক্টোবর। গত ১০ এপ্রিল সাবেক সিআইডি কর্মকর্তা সিরাজুল হকের সাক্ষ্য দেওয়ার দিন থাকলেও তিনি আসেননি। তখন সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৮ এপ্রিল নতুন দিন রাখেন ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, মূলত পুলিশ এ মামলায় সহায়তা করছে না। সমন, ওয়ারেন্ট পেয়েও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেন না। তাদের আদালতে আনতে আমাদের দৌড়াতে হচ্ছে, তাদের কাছে যেতে হচ্ছে। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ-উপরোধ করাসহ নানা রকমের কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা মামলাটি ভিন্ন খাতে অর্থাৎ ডাকাতি সাজাতে চেয়েছিল। এজন্য সাক্ষীদের আনতেও তাদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এ মামলায় অনেক আসামিই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মূলত ওই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। আশা করছি, আসামিদের যথাযথ সাজা দেবেন আদালত।

উল্লেখ্য, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে আমিন বাজারের বড়দেশী গ্রামসংলগ্ন কেবলার চরে বেড়াতে যান ঢাকার সাত ছাত্র, ডাকাত বলে তাদের ছয়জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরা হলেন-মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, তৌহিদুর রহমান পলাশ ও কামরুজ্জামান কান্ত, তেজগাঁও কলেজের টিপু সুলতান, বিইউবিটির ছাত্র সিতাব জাবীর মুনিব এবং ধানমন্ডির ম্যাপললিফের এ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম। সে সময় তাদের সঙ্গে থাকা আল আমিন নামে একজন প্রাণে বেঁচে যান। ওই ঘটনার পর আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। অপরদিকে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত গ্রামবাসীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করে। পরে বিচার বিভাগীয় তদন্তে আল আমিনসহ নিহত ছাত্ররা নিরপরাধ প্রমাণিত হন।  মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি র‌্যাব কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন আহমেদ ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ অভিযোগপত্রের পরে মামলাটি বিচারের জন্য এই আদালতে এলে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুলাই ৬০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এছাড়া ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে একই ঘটনায় করা ডাকাতি মামলা থেকে সেদিন অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা আমিনবাজারের বড়দেশি গ্রামে ছয়জনকে পিটিয়ে হত্যা করেছ। হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে ছয়জন পলাতক, একজন কারাগারে, ৫২ জন জামিনে এবং এক আসামি মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032210350036621