জন্ম থেকেই কবজি নেই মেয়েটির। কিন্তু তারপরও দৈনন্দিন কোনো কাজ থেমে থাকেনি তার। এমনকী লেখাপড়াও। স্বাভাবিকভাবে সবাই আঙুলের সাহায্যে লিখলেও মেয়েটি লেখে দুই বাহু এক সঙ্গে করে। শুধু লেখা নয়, দুই বাহু একসঙ্গে করে ছবি আঁকা, মাটি দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি সবই করতে পারে সে। সম্প্রতি বাহু দিয়ে লিখেই জাতীয় হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় সবার সেরা হয়েছে সে।
১০ বছর বয়সী বিস্ময়কর এই মেয়েটির নাম সারা হাইনসলে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যাণ্ডের সেন্ট জন রিজওনাল ক্যাথরিক স্কুলের গ্রেড থ্রি’র ছাত্রী সে। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের নিকোলাস ম্যাক্সিম আয়োজিত জাতীয় হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে সে। যদিও সারা বুঝতেই পারছে না তার এই পুরষ্কার জেতা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সবার কাছে।
সারার মা ক্যাথরিন হাইনসলে জানিয়েছেন, সারা কখনও কৃত্রিম হাত লাগাতে চায়নি। কিছু কিছু কাজ যেমন- কাঁচি দিয়ে কাগজ কাঁটা কিংবা এমন অনেক কাজের জন্য যখন তাকে কৃত্রিম হাত লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তখনও সে সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে।
সারার মা আরও বলেন, ‘সারা বিশ্বাস করে, সে কাজটি করতে পারবে। সে কারণে নিজের মতো করেই সে কাজগুলো করে।’ তার মতে, সারা মানসিকভাবে এতটাই শক্ত মনের যে সে যেটা বিশ্বাস করে সেটাই করতে পারে।
লেখার সময় সারা দুই বাহুতে পেন্সিলটা আটকে ধরে লেখে। সারা জানায়, লেখার সময় সে প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটা পয়েন্ট খুব মনোযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করে। সারার মতে, প্যাঁচানো লেখা তার কাছে শিল্পকর্মের মতো।
৪ বছর আগে সারার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে চীন থেকে। সেই সময় সে শুধুমাত্র ম্যানড্রিন ভাষায় কথা বলতে ও লিখতে পারতো। তবে খুব দ্রুতই সে তার বোনের সহযোগিতায় ইংরেজি ভাষা বলা ও লেখা শিখে ফেলে।
অবসর পেলেই সারা তার চারপাশের সবকিছুর ছবি আঁকতে পছন্দ করে। এছাড়া সে সাঁতার কাটতে, বোনের সঙ্গে খেলা করতে এবং স্কুলে দাবা খেলতে ভালোবাসে।
সারার মা ক্যাথরিন বলেন, ‘প্রতিদিন সারার কাজ দেখে আমি বিস্মিত হই। কোনো কাজ করতে সমস্যা হলে সে এড়িয়ে যায় না বরং কাজটা তার মতো করে শেষ করার চেষ্টা করে।’
জানা গেছে, আগামী ১৩ জুন এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারাকে হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার জন্য পুরষ্কার তুলে দেওয়া হবে। এছাড়া সেন্ট জন স্কুল থেকে প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে সারা জাতীয় পুরষ্কারটি পাওয়ায় গোটা স্কুলও তাকে নিয়ে গর্বিত।
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট