হানান হামিদের কথা কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এই তো কয়দিন আগেই তাকে নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড় হলো। কেরলের মেয়ে কোচির আল আসার কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী হানান হামিদ। পড়াশোনার জন্য রেলস্টেশনে মাছ বিক্রি করতেন তিনি। এক মাস আগেও কেউ তাকে খেয়াল করেনি। আর সেই হানানাই এখন মহাতারকা।
লেখাপড়া করতেই হবে। এমনই অদম্য ইচ্ছা নিয়ে রেল স্টেশনে মাছ বিক্রি করে খবরের শিরোনামে আসেন হানান হামিদ। আর সেই খবর নিয়েই তুলকালাম হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। মদ্যপ বাবা অনেক দিন আগেই সংসার ছেড়ে চলে যান। তারপর থেকেই মা মানসিক ভারসাম্যহীন। এই পরিস্থিতিতে সংসার সামলানো আর লেখাপড়া চালানোর কঠিন লড়াইটা সামলাতেই হয় হানানকে। তাকে নিয়ে খবর করে কেরলের একটি প্রথম শ্রেণির দৈনিকে। আর তার পরেই হইচই পড়ে যায়।
ওই খবরে বলা হয়, নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজে তুলতে রাত থাকতে বিছানা ছাড়তে হয় হানানকে। দিবাগত রাত ৩টার সময়ে সাইকেল নিয়ে যান চম্বক্করার পাইকারি মাছ বাজারে। সেখান থেকে কেনাকাটা সেরে অটোতে করে নিয়ে আসেন কোচির থাম্মানান এলাকায়। বাড়ি ফিরেই শুরু হয় কলেজ যাওয়ার প্রস্তুতি। লোকাল বাসে ৬০ কিলোমিটার দূরের কলেজ। সারা দিন ক্লাস করে ফিরে বাজারে মাছ বিক্রি। রাতে বাড়ি ফিরে আবার ভোর ৩টায় উঠে মাছ কিনতে যাওয়া। এটাই হামিদ হানানের ৩৬৫ দিনের জীবনযাপন।
ভারতের কেরলে এখন ভয়াবহ বন্যা চলছে। গতকাল শনিবার হেলিকপ্টারে চেপে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বিপর্যস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। শেষ পাওয়া খবরে নিহতের সংখ্যা ৩২৪। বিপর্যস্ত ২ লাখ মানুষকে অন্যত্র সরাতে হয়েছে। প্রয়োজন প্রচুর ত্রাণ। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রের পক্ষে ৫০০ কোটি রুপি দেওয়ার কথা দিয়েছেন। বিভিন্ন রাজ্য সরকারও কোটি কোটি রুপি সাহায্য দিচ্ছে। এরই মধ্যে ওই এক রত্তিমেয়ে হানান হামিদ মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তুলে দিয়েছেন তার জমানো দেড় লাখ রুপি!
পরিমাণে সেই টাকার অংকটা হয়তো বেশ কম। কিন্তু অক্লান্ত পরিশ্রমে যে মেয়ে নিজের লেখাপড়া আর মায়ের চিকিৎসা চালায় সে যখন দেড় লাখ রুপি ত্রাণের জন্য দেয় তখন তা বাকি সব কিছুকেই ম্লান করে দেয়। তাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। হানান মিডিয়াকে বলেছেন, তার দারিদ্রের কথা জানার পরে অনেকেই সাহায্য করেছেন। অনেকে অর্থও দিয়েছেন। কিন্তু এখন বন্যার্তদের প্রয়োজন অনেক বেশি। মানুষের থেকে পাওয়া সহযোগিতার অর্থ তিনি আর্ত মানবতার সেবায় ব্যয় করেছেন।