সময়ের সাথে সাথে আধুনিকায়ন হয়েছে প্রযুক্তির। বিশেষত গত এক দশকে খুব দ্রুত বদলে গেছে প্রযুক্তির দৃশ্যপট। এর ধারাবাহিকতা বর্তমান রয়েছে এখনও। আর তাতে করে একে একে হারিয়ে যাচ্ছে পুরোনো সব জনপ্রিয় প্রযুক্তি। এক সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি পণ্য এখন নাম লিখিয়েছে বাতিলের খাতায়। এরকম কিছু প্রযুক্তির কথা জানাচ্ছেন মোজাহেদুল ইসলাম। রোববার (৪ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
টাইপরাইটার
সময়ের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি আবিষ্কার ছিল টাইপরাইটার। সহজে মানুষের কথা আর কাজকে ধারণ করে রাখার জন্য এটি রাজত্ব করে অনেক দিন। ইলেকট্রো মেকানিক্যাল এই যন্ত্রটির উদ্ভব ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। তারপর থেকে গত শতাব্দীর ৮০ দশক পর্যন্ত এটি ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র। কম্পিউটারের আবির্ভাবে এবং ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যারের আগ্রাসনের মুখে হারিয়ে যায় এই টাইপরাইটার। এখন এর স্থান কেবল জাদুঘরেই।
টেলিগ্রাফ
দূর-দুরান্তে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের প্রথম কার্যকরী যন্ত্রের নাম টেলিগ্রাফ। উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই এর আবির্ভাব। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে স্যামুয়েল মোর্স তৈরি করেন সোর্স টেলিগ্রাফ যা পরিচালিত হতো মোর্স কোডের সাহায্যে। পরবর্তীকালে নিকোলাস টেসলা তারবিহীন টেলিগ্রাফির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন বিশ্বকে। এর হাত ধরেই একসময় চলে আসে টেলেক্স। ইন্টারনেটের এই যুগে এসে টেলিগ্রাফ এক প্রাচীন যন্ত্রের নাম যা এখন অচল।
অডিও ক্যাসেট
একটা সময় পর্যন্ত মানুষের গান শোনার প্রধান মাধ্যম ছিল অডিও ক্যাসেট আর তার সাথে ক্যাসেট প্লেয়ার। ৬০ মিনিট বা ৮০ মিনিটের একটি অডিও ক্যাসেট বার বার শুনতো সকলে। পরবর্তীকালে সিডি প্রযুক্তির আবির্ভাব সেইসব ক্যাসেটের দিনকে অতীত করে দিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। আরও পরে কম্পিউটার আর এমপিথ্রি’র আবির্ভাবে অডিও ক্যাসেট এখন অচল প্রযুক্তি।
ভিডিও গেম
কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশেই পাড়ায় পাড়ায় ছিল ভিডিও গেমের দোকান। কিশোরদের দিন রাতের নেশা ধরানো আড্ডা ছিল সেইসব ভিডিও গেমের দোকানে। নানান ধরনের গেমে জমজমাট ছিল ভিডিও গেমের দোকানগুলো। সময়ের সাথে সাথে গেম ছড়িয়েছে মোাবাইলে, কম্পিউটারে। মানুষের হাতে হাতে মোবাইল আর পিসিতে অনলাইন গেমিং-এর দাপটে এখন ভিডিও গেমের দোকান খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
ওয়্যাকম্যান
অডিও ক্যাসেটের সময়েই আবির্ভাব ওয়াকম্যানের। বহনযোগ্য ছোট্ট এই ডিভাইসটি মানুষের চলার পথে গান শুনিয়েছে বহুদিন। পরবর্তীকালে সিডি আসার পর সিডি ওয়্যাকম্যানও দীর্ঘদিন রাজত্ব করে। কিন্তু এমপিথ্রি প্লেয়ার ধীরে ধীরে সহজলভ্য হয়ে পড়ায় অবসান ঘটে ওয়্যাকম্যানের। ওয়াকম্যানের প্রথম নির্মাতা সনি এর মধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে দুই ধরনের ওয়্যাকম্যানের বাতিল করার। ওয়াকম্যান তৈরি বন্ধই করে দিয়েছে তারা।
ফ্লপি ডিস্ক
কম্পিউটারের এক্সটার্নাল মেমোরি হিসেবে প্রথম বাজারে ফ্লপি ডিস্ক। তার মেমোরির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪৪ মেগাবাইট। এখন শুনলে হাস্যকর মনে হলেও এটাই ছিল সে সময়ের জন্য বিশাল মেমোরি স্পেস। ডিস্ক ড্রাইভ হিসেবেও ফ্লপিই ছিল প্রধান। মেমোরির পরবর্তী দ্রুত উন্নয়নে ফ্লপি খুব দ্রুতই বাজার হারিয়ে ফেলে। হার্ডডিস্কের যুগে এসেও ডাটা বহনে এটি রাজত্ব করে কিছুদিন। ফ্ল্যাশ ড্রাইভের আবির্ভাবে ফ্লপি পরিণত হয় জঞ্জালে।
কার্বন কপি পেপার
লেখার কপি করার জন্য একসময় বহুল ব্যবহৃত হতো কার্বন কপি পেপার। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এসেছে ফটোকপি মেশিন। আর হাতের নাগালের মূল্যেই এখন পাওয়া যায় প্রিন্টার, স্ক্যানার-এর সুবিধাসম্পন্ন যন্ত্র। তা ছাড়া এখন বিশেষভাবে তৈরি দরকারি ডক্যুমেন্টগুলোতে এমন কাগজ ব্যবহৃত হয়, যাতে পরবর্তী পৃষ্ঠাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই লেখার প্রতিলিপি তৈরি হয়- অতিরিক্ত কার্বন কপি কাগজের আর প্রয়োজন হয় না। কার্বন কপি পেপার তাই এখন অচল।
ভিসিআর
সিনেমা দেখার জন্য একসময়ে জনপ্রিয় প্রযুক্তি ভিসিআর এখন জাদুঘরে তুলে রাখার উপযোগী হয়ে গেছে। সিডি/ভিসিডি/ডিভিডি পেরিয়ে বিশ্ব এখন এইচডি ব্লু-রে’র দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ডিস্ক এর প্রতিই এখন মানুষের আকর্ষণ অনেক কম। ডিজিটাল ফরম্যাটের সব ভিডিও এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। সেখানে আর ভিসিআর-এর কোনো স্থান নেই।
পাবলিক ফোন বুথ
আগের দিনে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং প্রতিষ্ঠানে ছিল পাবলিক ফোন বুথ। ফোন কার্ডের মাধ্যমে এসব বুথ থেকে ফোন করার সুযোগ পেতো মানুষ। অনেক দিন পর্যন্ত অত্যন্ত কার্যকারিতার সাথে কাজ করে এইসব বুথ। তবে মোবাইল ফোনের দ্রুত প্রসার পাবলিক ফোন বুথকে অপ্রয়োজনীয় করে ফেলে। এখনকার দিনে মোবাইলের আধিক্যে ল্যান্ডফোনই অনেকখানি হুমকির মুখে, সেখানে পাবলিক ফোন বুথের কথা বলাই বাহুল্য।
ক্যালকুলেটর ঘড়ি
ফ্যাশন এবং প্রয়োজনীয়তা- এই দুইয়ের মিশ্রণ হাতঘড়ির সাথে ক্যালকুলেটর এই ধারণাটি বেশ জনপ্রিয় হয় সব ধরনের মানুষের কাছেই। এই ধরনের ঘড়িগুলোর বেশ চাহিদা ছিল সবার মাঝে। সময়ের সাথে সাথে সেই চাহিদা বদলেছে। এখন এক মোবাইলের মধ্যেই রয়েছে ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, ক্যালেন্ডার সহ সব ধরনের ফাংশন। হাতঘড়িতে এখন আর ক্যালকুলেটর চায় না কেউ, হাতঘড়িতে এখন চলে এসেছে মোবাইল ফোন।