চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়হিসেবের খাতায় ‘মিছে’ হয়ে গেল ৬ বছর

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

সিন্ডিকেট সভার এক সিদ্ধান্তে ২০১২ খ্রিস্টাব্দে তাঁরা হয়ে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছয় বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করার পর আরেক সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে তাঁদের ফিরতে হচ্ছে আগের কর্মস্থল বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে। 

কিন্তু এসব শিক্ষকের কলেজে ফেরত পাঠানোর যে অফিস আদেশ জারি হয়েছে তাতে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার কোনো হিসাবই থাকছে না।
গত ২৪ জুন এই ১৮ (তাঁদের মধ্যে দুজন বর্তমানে পিআরএল বা অবসর-উত্তর ছুটিতে আছেন) শিক্ষককে কলেজে ফেরত পাঠানোর অফিস আদেশ জারি করা হয়। এর আগে ৩১ মে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১৫তম সিন্ডিকেট সভায় তাঁদের কলেজে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ।

২০১২ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) যাত্রা শুরু হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজকে সেই ইনস্টিটিউটের আওতায় আনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে দিয়ে কলেজের ১৮ জন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে যান। এরপর থেকে এই শিক্ষকেরা একসঙ্গে আইইআর ও ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্লাস নিয়ে আসছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন ছাড়া তাঁদের কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্তীকরণ করা এবং ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করার যে ডিগ্রি ও যোগ্যতা থাকা দরকার তা তাঁদের না থাকায় তাঁদের কলেজে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অফিস আদেশে ১৮ জন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আত্তীকরণ সম্পর্কিত আগের সব সিদ্ধান্ত বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এ শিক্ষকেরা ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখায় ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে যুক্ত হবেন বলে জানানো হয়। অর্থাৎ এ আদেশ অনুসারে গত ছয় বছরে ১৮ শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষকতা করলেও তাঁদের সেই চাকরির হিসাব আর গণ্য হবে না।

সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক!

অফিস আদেশে আরও বলা হয়, এ ১৮ শিক্ষকের মধ্যে যাঁদের ৬০ বছর এখনো পূর্ণ হয়নি তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখায় নিয়োগ, পদমর্যাদা, বেতন-ভাতাদি, জ্যেষ্ঠতা, দায়িত্ব ইত্যাদি পূর্বের ধারাবাহিকতায় বলবৎ থাকবে।

তবে তাঁদের মধ্যে কলেজে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক হয়ে যাওয়া ৬ শিক্ষকের পদ আর সহকারী অধ্যাপক থাকছে না। অফিস আদেশে তাঁদের পদের বিষয়ে কোনো কিছু স্পষ্ট করা হয়নি। এ ছয় শিক্ষকের একজন মো. ইফতেখার আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, কলেজে ফেরত গেলে তাঁর পদ কী হবে তা তিনি জানেন না। তাঁদের দেওয়া আদেশে সে রকম কিছু বলা হয়নি।

তবে তাঁরা যে পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন সেই প্রভাষক পদেই ফিরতে হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ। তিনি বলেন, এ ছয়জনের বেতন-ভাতা কেমন হবে তা নির্ধারণ করতে একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

জুনের বেতন পাননি ১৮ শিক্ষক

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক দপ্তর সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জুন মাসের বেতন পেয়েছেন গত ২৭ জুন। তবে এখনো কলেজে ফিরে না যাওয়ায় ওই শিক্ষকদের বেতন হয়নি। আদেশে শিক্ষকদের কলেজের অধ্যক্ষের মাধ্যমে রেজিস্টারের কাছে যোগদানপত্র পেশ করতে বলা হয়। তাঁরা এখনো যোগদান না করায় তাঁদের জুন মাসের বেতন হয়নি বলে জানিয়েছেন হিসাব নিয়ামক দপ্তরের এক কর্মকর্তা।

দ্বিধাবিভক্ত শিক্ষকেরা

কলেজে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকে সিদ্ধান্ত অনুসারে কলেজে ফিরে যেতে চান, আবার কেউ কেউ বিষয়টিকে অপমানজনক হিসেবে দেখছেন। তারা ফিরে না গিয়ে আইনগতভাবে মোকাবেলার চিন্তা করছেন।

এ বিষয়ে কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, তাঁরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। আদালত তাঁদের কলেজে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। তবে সরকারিভাবে চিঠি এখনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এসে পৌঁছেনি।

তবে এ ধরনের বিষয়ে জানা নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.016804933547974