শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী সংখ্যার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় ওই মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণি কক্ষে ৩৩ জন শিক্ষার্থী, ১১ জন শিক্ষককে ও ইবতেদায়ি শাখার সব কয়টি শ্রেণি কক্ষ তালাব্ধ দেখা যায়। অথচ ওই মাদ্রাসার কাগজে কলমে রয়েছে ইবতেদায়ি ১১৪ জন ও দাখিলে ১৪১ জন শিক্ষার্থী।
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ওই মাদ্রাসাটি ট্রাস্ট পরিচালিত। ওই মাদ্রাসায় কর্মরত ১১জন শিক্ষকই এমপিওভুক্ত। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ১০জন। এছাড়া একজন অফিস সহকারী, একজন আয়া,একজন নৈশ্যপ্রহরী রয়েছে। অভিযোগ আছে, শিক্ষকসহ অন্য কর্মচারীরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো আসেন, আবার হাজিরা খাতায় সই করে চলে যান।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে মাদ্রাসাটিতে বিভিন্ন অনিয়ম চলছে। প্রতিদিন বেলা আটটায় ক্লাস শুরু হয়, আর দুপুর একটা থেকে দেড়টার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম থাকার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষকদের উদাসীনতাকেই দায়ী করেন তারা। তারা আরও জানান, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম হলেও শিক্ষকরা হাজিরা খাতায় প্রায়ই উপস্থিতি দেখান।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সুজন আলী বেলেন, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী আসে না বললেই চলে। আসলেও ৪-৫টার বেশি ক্লাস হয় না।’ জানতে চাইলে মাদ্রাসার সুপার (ভারপ্রাপ্ত) আফরুন্নাহার শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির কথা স্বীকার বলেন, উপস্থিতি কম হয়, কিন্তু আমরা ইবতেদায়ি, জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন ও ফরম ফিলাপ সমপূর্ণ করেছি। ইবতেদায়ি শাখার সবক’টি শ্রেণি কক্ষ বন্ধ বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আসে না, পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিস্কুট দেওয়ায় এখানে আসতে চায় না। কিন্তু পরীক্ষার সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থী নিয়ে আসি।’
মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও হাজী অছি আমরুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল হাকিম বলেন, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়ানো ও সঠিক ভাবে ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি, দুই বছরের মধ্যেই মাদ্রাসাটি আগের ঐতিহ্য ফিরে আসবে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল মাদ্রাসাটিতে অচলাবস্থার কথা স্বীকার বলেন, আমি ওই মাদ্রাসায় প্রায় একবছর ধরে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কোন উন্নতি লক্ষ্ করা যাচ্ছে না।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’