১২১ স্কুলে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনায় অনিয়ম

বগুড়া প্রতিনিধি |

বগুড়া সদর উপজেলার ১২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজিটাল ওই যন্ত্রটি নিজ নিজ স্কুল কর্তৃপক্ষের কেনার কথা থাকলেও স্থানীয় উপজেলা পরিষদ এবং শিক্ষা অফিস তাতে বাদ সেধেছে। বিদ্যালয়গুলোর ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের অভিযোগ, স্থানীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের নির্ধারিত একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বায়োমেট্রিক মেশিনগুলো বেশি দামে কিনতে বাধ্য করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের বাইরে যাতে অন্য কোনো স্থান থেকে বায়োমেট্রিক মেশিন কেউ কিনতে না পারে সেজন্য সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিদ্যালয়গুলোর প্রধানদের কাছে পছন্দের সেই প্রতিষ্ঠানের বিল ভাউচারও সরবরাহ করা হয়। এমনকি মেশিন সরবরাহের আগেই বিলের সঙ্গে সেই ভাউচারগুলোও জমা নেয়া হয়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা জানান, নির্ধারিত সময়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সারাদেশে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যন্ত্রটি কেনার জন্য বিদ্যালয়গুলোর নিজ নিজ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের 'স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান' বা 'স্লিপ কমিটি'র নামে সরকারিভাবে বার্ষিক যে বরাদ্দ দেয়া হয় তার পরিমাণও বাড়ানো হয়।

নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা উপকরণসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু কেনাকাটার এখতিয়ার শুধু ওই স্লিপ কমিটির হলেও বগুড়ায় তা মানা হয়নি। সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বগুড়া শহরের খান্দার এলাকায় অবস্থিত 'সফটোনিক আইটি' নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিল ভাউচার সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হয়। বিদ্যালয়ের নাম ও ঠিকানার জায়গা ফাঁকা রেখে বায়োমেট্রিক মেশিন, কেবল, সফটওয়্যার সাপোর্টিং সরঞ্জামের সঙ্গে সার্ভিস চার্জ এবং ভ্যাট, অন্যান্য করসহ সেই প্রতিষ্ঠানের ভাউচারে প্রতিটি যন্ত্রের দাম দেখানো হয় ২১ হাজার টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত শুধু পল্লীমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি স্কুলেই বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে বিল-ভাউচার দাখিল করা হয়েছে সব বিদ্যালয়ের নামে।

গত মঙ্গলবার পল্লীমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকদের কক্ষে ওই হাজিরা মেশিন যুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষকরা জানান, বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান শফিক, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জব্বারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত ৩০ জুন ওই মেশিন সংযোজন করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, মেশিনটি উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাদের দেয়া হয়েছে।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আপেল মাহমুদ জানান, বিল-ভাউচারে মেশিনের দাম ২১ হাজার টাকা দেখানো হলেও তারা বাজারে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন মেশিনটির প্রকৃত দাম ১৬ হাজার টাকা। এদিকে বগুড়া সদর উপজেলার আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের বিদ্যালয়ে ওই মেশিন এখন পর্যন্ত সংযোজন করা না হলেও তার মূল্য বাবদ 'সফটোনিক আইটি' নামে এক প্রতিষ্ঠানের নামে ২১ হাজার টাকার ভাউচার শিক্ষা অফিসে দাখিল করতে হয়েছে।

এ ব্যাপারে সফটোনিক আইটির সিইও সাখাওয়াত হোসেন জানান, বগুড়া সদর উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য তাদের কাছ থেকেই বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, তারা যে মেশিন সরবরাহ করছেন তার দাম ১৬ হাজার টাকা। তবে তার দাবি, ওই মেশিনের সঙ্গে অনলাইন ডিভাইস সংযোগ এবং দীর্ঘমেয়াদি সার্ভিসিং সুবিধা দিতে হবে বলেই পাঁচ হাজার টাকা বেশি রাখা হয়েছে।

বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিনগুলো দোকানের পরিবর্তে কেন উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রধান শিক্ষকদের নিতে বাধ্য করা হচ্ছে- জানতে চাইলে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, এ অভিযোগ ঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোকজন গিয়েই মেশিন স্কুলে সংযোজন করছে। তিনি বলেন, 'আমরা শুধু ভাউচার নিচ্ছি।' ১২১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানে মেশিন সরবরাহ করা হলেও সবগুলোর বিল-ভাউচার জমা নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩০ জুনের মধ্যে হিসাব দাখিলের বাধ্যবাধকতার কারণেই এটি করতে হয়েছে।

বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়গুলোতে হস্তক্ষেপ এবং পছন্দের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তা কিনতে বাধ্য করানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান শফিক। তিনি বলেন, শুধু মেশিন কেনা তাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং সেটির সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসের অনলাইনে যোগাযোগ স্থাপন এবং পাঁচ বছর ধরে সার্ভিসিং সুবিধা যাতে নিশ্চিত হয় সেজন্যই একটি প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'এতে স্বচ্ছতার প্রশ্নটি হয়তো অমূলক হবে না, কিন্তু আমরা যা করেছি সেটা সবার ভালোর জন্যই করেছি।'


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059390068054199