প্লে থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত টানা ১৪ বছরে এক দিনও ক্লাস কামাই দেয়নি ঝালকাঠির নলছিটির ‘ক্লাস প্রেমিক’ কে এম রাইদ ইসলাম রামিম। আর এ অনন্য নজির স্থাপন করায় বুধবার (১২ জুন) দুপুরে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল ইসলাম তাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পারিবারিক সমস্যা এমনকি রোগব্যাধি উপেক্ষা করেও নিয়মিত ক্লাসে হাজির থাকতো সে। পড়ালেখার প্রতি ভালোবাসা, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ও পরিবারের উৎসাহে এক দিনও ক্লাস কামাই না করে অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে রামিম।
এ বছর সে ঢাকার রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। রামিম ঝালকাঠির নলছিটি শহরের ব্যবসায়ী কে এম মোস্তাক খানের ছেলে। তাঁর মা গৃহিণী নাজমা আক্তার। ক্লাসে শতভাগ উপস্থিতির কারণে বিদ্যালয় থেকে সে একাধিক পুরস্কার ও সনদপত্র পেয়েছে। তাকে শিক্ষার্থীদের ‘অনুকরণীয় আদর্শ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তাঁর শিক্ষকরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে রামিমকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাঁর বাবা মা ছাড়াও নলছিটি পৌর মেয়র তছলিম উদ্দিন চৌধুরীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রামিম জানায়, সে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের একজন মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার প্রবল আগ্রহ তাঁর। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছে রামিম।
জানা গেছে, রামিমের জন্ম ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে নলছিটি পৌর কিন্ডার গার্টেনে প্লে ক্লাসে ভর্তি করা হয় তাকে। প্লে ক্লাসে এক বছরে টানা উপস্থিতি ছিল তাঁর। পরে নার্সারি ক্লাসেও শতভাগ উপস্থিতি। দুই বছরের টানা উপস্থিতির কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে দুটি পুরস্কার দেয়। এতে শ্রেণিকক্ষের প্রতি তাঁর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ওই কিন্ডার গার্টেন থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং ওই প্রতিষ্ঠান থেকে একমাত্র সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। সেই কিন্ডার গার্টেনে শতভাগ ক্লাসে উপস্থিতির জন্য সাত বছরে সাতটি পুরস্কার দেওয়া হয় তাকে। এক নাগাড়ে সাত বছর টানা শতভাগ ক্লাসে উপস্থিতি ও ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ওই কিন্ডার গার্টেন থেকে একাই ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করায় তৎকালীন অধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান খান হেলাল তাকে বিশেষ পুরস্কার (ক্রেস্ট) ও সনদপত্র প্রদান করেন। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে রামিম নলছিটি মার্চেন্টস মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সেখানেও নিয়মিত ক্লাস শুরু করে। এরই মধ্যে তাঁর বাবা ও মা ভারত যেতে তাঁর জন্য পাসপোর্ট ও ভিসা সংগ্রহ করেন। কিন্তু বেঁকে বসে সে। ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকার কারণে তার ভারত ভ্রমণে যাওয়া হয়নি। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতির পাশাপাশি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পায় সে। গত ১২ বছরের মধ্যে তাঁর নানা, মামা ও চাচার মৃত্যু হয়েছে, তবু তাঁর ক্লাস কামাই হয়নি। ঢাকার রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার আগে শেষ ক্লাসে অংশ নিয়ে সে টানা ১৪ বছর শতভাগ ক্লাসে উপস্থিতির রেকর্ড গড়ে। প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১ থেকে ৩ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে তাঁর রোল নম্বর।