২০ হাজার শিক্ষক উত্কণ্ঠায়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

স্কুল-কলেজ সরকারি হলেও এখনও বেসরকারি রয়ে গেছেন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এরই মধ্যে অনেকে অবসরে গেছেন। আবার কারো কারো চাকরি শেষ পর্যায়ে। এছাড়া, অন্যদের মধ্যেও নানা ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। সব মিলিয়ে সর্বশেষ সরকারিকরণ হওয়া ২৯৯ কলেজের ১২ হাজার শিক্ষক এবং ৩২৫ স্কুলের প্রায় আট হাজার শিক্ষক নিজেদের পেশাজীবন নিয়ে রয়েছেন উৎকণ্ঠায়। সুবিধাবঞ্চিত হয়েই অবসরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। শনিবার (৬ মার্চ) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারিকরণ হওয়া কলেজের শিক্ষকরা বলছেন, জনবল সরকারিকরণের কাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে। এভাবে চলতে থাকলে সব কলেজের কাজ শেষ করতে তিন থেকে চার বছর লেগে যাবে। ফলে এই সময়ে আরও সহস্রাধিক শিক্ষক অবসরে চলে যাবেন। এতে যেমন তারা সরকারি সুবিধাবঞ্চিত হবেন, অন্যদিকে শিক্ষক সংকট তৈরি হবে। লেখাপড়া বিঘ্নিত হবে। তাই দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, সরকারিকরণের জন্য সর্বশেষ কলেজ তালিকাভুক্ত করা হয় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্টে। সরকারিকরণের আদেশ জারি হয় গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে। তিন ধাপে সরকারি করার আদেশ জারি হয় মোট ২৯৯টি কলেজের। সরকারিকরণ হওয়া কলেজের শিক্ষকদের মর্যাদা কী হবে তা নিয়ে গত বছরের ৩১ জুলাই ‘সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮’ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আত্তীকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহুরুল হক বলেন, ‘সরকারিকরণের প্রস্তুতি চলছে ৩ বছর ধরে; কিন্তু এখনও শেষ করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠান সরকারি হয়েছে তা-ও ৭ মাস হয়ে গেছে; কিন্তু আমরা এখনও বেসরকারিই রয়ে গেছি।’

সূত্র জানায়, এত সংখ্যক কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের কোন প্রক্রিয়ায় দ্রুত সরকারি করা যায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই শিক্ষা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সময় লেগে যায়। পুরাতন পদ্ধতিতে সরকারিকৃত ২৯৯ কলেজের পদ সৃজন করতে আগের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। এই প্রক্রিয়ায় অসংখ্য শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি হওয়ার সুবিধাবঞ্চিত থেকেই অবসরে চলে যাবেন। যে কারণে দ্রুত পদ সৃজন করতে নানামুখী চিন্তাভাবনা চলে।

জানা গেছে, সব কলেজে সমন্বিত পদ সৃজন করার অংশ হিসাবে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকা জেলার চারটি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে সভা করে। সভায় কলেজগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণ কার্যক্রম স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত এবং দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কলেজের ১৫ দফা তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব বা অতিরিক্ত সচিবের প্রত্যয়নসহ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে কলেজগুলোর সংখ্যাতাত্ত্বিক পদসৃষ্টির প্রস্তাবনা পাঠানো হলে জনপ্রশাসন একই সঙ্গে জনবলের সকল কাগজপত্র পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সে আলোকে মাউশি থেকে কলেজগুলোর কাছে নতুন করে তথ্য চাওয়া হচ্ছে। এই তথ্যের সঙ্গে আগের তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুন তথ্য যোগ করা হচ্ছে, যাচাই-বাছাই চলছে।

মাউশি সূত্র জানায়, অধিদপ্তরের কলেজ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত কাজ করা হচ্ছে। এই কাজের জন্য মাত্র তিনজন সহকারী পরিচালক রয়েছেন। তবে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আরও ৯ জন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সংযুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মাত্র ১০টি কলেজের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এই শাখা থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি মাসের ১৫ এবং ৩০ তারিখের মধ্যে অন্তত ১৮টি কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাউশিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, জনবল কাঠামো সরকারিকরণের জন্য আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এ কাজ করার জন্য বাড়তি জনবল সংযুক্ত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই সব কলেজের তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারবো।

স্কুলের জনবল সরকারিকরণ

প্রক্রিয়া কিছুটা এগিয়ে

স্কুলের জনবল সরকারিকরণের প্রক্রিয়া কিছুটা এগিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ১টি, ২৫ নভেম্বর ৩টি, ১৮ নভেম্বর ৪টি, ১৫ নভেম্বর ১৬টি, ১২ নভেম্বর ৪টি, ২৯ অক্টোবর ৪টি, ১১ অক্টোবর ১৯টি, ৯ অক্টোবর ১৩টি, ২৮ সেপ্টেম্বর ২৫টি, ২৪ সেপ্টেম্বর ৪৩টি, ১৩ সেপ্টেম্বর ৪৪টি এবং ১৬ সেপ্টেম্বর ১টিসহ মোট ৩২৫টি স্কুলের সরকারিকরণের আদেশ জারি করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব লুৎফুন নাহার জানিয়েছেন, ৩২৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮ স্কুলের জনবল নিয়োগের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ৮১টি স্কুলের জনবলের ফাইল সংশ্লিষ্ট শাখা ও মন্ত্রণালয়ে চলমান রয়েছে। এগুলো ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে শেষ হতে পারে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্কুলের জনবল সরকারিকরণের কাজও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027220249176025