৩৭তম বিসিএস: আটকে আছে ৬১ জনের ভবিষ্যৎ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

৩৭তম বিসিএসে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ১ হাজার ৩১৪ জনকে ক্যাডার হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। এর প্রায় ৯ মাস পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২২১ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বাদ পড়েন ৬১ জন। তাঁরা নিয়োগ পেতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারস্থ হচ্ছেন। বুধবার (৩০ অক্টোবর) প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোছাব্বের হোসেন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বাদ পড়াদের অভিযোগ, ৩৭তম বিসিএস ক্যাডারদের পদায়নের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও বাদ পড়াদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এদিকে মন্ত্রণালয় বলছে, বাদ পড়াদের বিষয়ে তাঁরা পর্যালোচনা করছে, সেটি শেষ হলে তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছরের ১২ জুন চূড়ান্ত ফলাফলে পিএসসি ১ হাজার ৩১৪ জনকে ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ করে। এর প্রায় ৯ মাস পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২২১ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

বাদ পড়া প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের মধ্যে প্রশাসনে ১৩ জন, শিক্ষায় ১০ জন, পুলিশে ২ জন, চিকিৎসক ১৪ জন, কৃষিতে ২ জনসহ অন্য ক্যাডারের কয়েকজন আছেন। তাঁদের কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে চূড়ান্ত গেজেটে তাঁদের নাম আসেনি। বিসিএসে সুপারিশ পাওয়ার পর পরিবারে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে নাম না আসায় পরিবারে সংকট তৈরি হয়েছে।

বাদ পড়া প্রশাসন ক্যাডারের এক প্রার্থীর বাড়ি নাটোর। তিনি জানান, নারী প্রার্থী হওয়ায় তাঁর পক্ষে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে একা আসা সম্ভব হয় না। প্রতিবারই বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়। বাবাও চাকরিজীবী। তিনি ছুটি নিয়ে মেয়ের জন্য এ পর্যন্ত অন্তত ২০ বার মন্ত্রণালয়ে এসেছেন। কিন্তু কবে তাঁর মেয়ের নিয়োগ হবে, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কেউ কিছু বলতে পারেননি। প্রতিবারই নিয়োগের আশ্বাস পেয়ে ফিরে যান। মন্ত্রণালয়ে এতবার যাওয়ার পরও নিয়োগ না হওয়ায় তাঁদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। ওই প্রার্থী দাবি করেন, তাঁর মা-বাবা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।

বাদ পড়া শিক্ষা ক্যাডারের এক প্রার্থী বলেন, তাঁর চাকরির আবেদনের বয়স নেই যে অন্য চাকরির আবেদন করবেন। তাঁর বাবা কৃষক, মা গৃহিণী। বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এখন কৃষিকাজ আর তেমন করতে পারেন না। ফলে সংসার চালাতে তাঁকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ওই প্রার্থী বলেন, চাকরিতে যোগ দিতে না পারার কারণে তিনি তাঁর বাবার চিকিৎসা বা সংসারে সহযোগিতা করতে পারছেন না।

শিক্ষা ক্যাডার থেকে বাদ পড়া আরেক নারী প্রার্থী বলেন, তিনি অনেকবার মন্ত্রণালয়ে গিয়েও নিয়োগের বিষয়ে কিছু জানতে পারেননি।

বাদ পড়া প্রার্থীদের কয়েকজন বলেন, ৩৭তম বিসিএসে তাঁদের চাকরি হচ্ছে—এমন সম্ভাবনার পর তাঁরা আর কোনো বিসিএস বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা দেননি। এক প্রার্থী প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ পান, আবার সহকারী বিচারক পদেও সুপারিশ পান। নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে তিনি কোনো চাকরিতেই যোগ দিতে পারেননি।

বাদ পড়া কয়েকজন প্রার্থী ইতিমধ্যে পিএসসির মাধ্যমে সুপারিশ পেয়ে নন-ক্যাডারের বিভিন্ন পদে চাকরি করছেন। তাঁরা জানান, তাঁরা যেসব চাকরি এখন করছেন, তাতেও পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে। তাঁদের কোনো সমস্যা থাকলে তাঁরা সেখানেও বাদ পড়ার কথা। কিন্তু কেন ৩৭ তম বিসিএসের চূড়ান্ত গেজেটে তাঁদের নাম এল না তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রার্থীরা বলেন, একটি বিসিএসের জন্য তিন থেকে চার বছর লেগে থাকতে হয়। অনেক অপেক্ষার পর ফল ও প্রজ্ঞাপন হতে লম্বা সময় লাগে। এ অবস্থায় শুধু নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে বাদ পড়লে মন ভেঙে যায়।

বাদ পড়া প্রার্থীরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আত্মীয়স্বজন চাকরির কথা জিজ্ঞেস করলে তাঁরা কোনো উত্তর দিতে পারেন না। তাঁদের সঙ্গে থাকা অন্যরা বেতন-বোনাস তুলছেন আর তাঁরা চাকরি পাবেন কি না, সেই অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন। এই অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।

ওই প্রার্থীরা আরও বলেন, সাধারণত দেখা যায়, বিসিএস ক্যাডারদের যাঁরা গেজেট থেকে বাদ পড়েন, তাঁদের সমস্যা সমাধান করে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয় গেজেট, তৃতীয় গেজেট প্রকাশ হয়। কিন্তু তাঁদের ক্ষেত্রে কিছুই হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ৩৭তম বিসিএসের গেজেটে যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁরা গেজেটভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। তাঁদের আবেদনপত্র ও অন্যান্য নথি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পর্যালোচনা শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029690265655518