৩৯তম বিশেষ বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১০৬ চিকিৎসককে শর্তসাপেক্ষে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগের সুপারিশ করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। ফলে গত ৫ মাস ধরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রত্যাশীদের বিড়ম্বনারও অবসান হলো।
শর্তানুসারে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রত্যাশীদের অঙ্গীকারনামায় সই করে বলতে হবে- 'সংশ্নিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে যদি বাদ পড়েন বা বিরূপ মন্তব্য পাওয়া যায় তাহলে ফলাফল মেনে নিতে বাধ্য থাকবেন।' গত ৬ ও ৮ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রত্যাশী ১১৫ জনের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়।
গত ১৬ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এই সুপারিশসহ এ সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেন। এরপর ১৯ জানুয়ারি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন সুপারিশসহ ১৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য অনুমোদন করেন।
জামুকার প্রতিবেদনে বলা হয়, '১০৬ জন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্রাথমিকভাবে শর্তসাপেক্ষে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। তাই তাদের পোষ্যদের চাকরিতে যোগদানের সুযোগ দেওয়া বাঞ্ছনীয়। সে মতে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার শর্তে চাকরিতে যোগদানের সুযোগ দেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে তাদের (পোষ্য) সাময়িকভাবে প্রত্যয়ন করা হলো। তবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এই মর্মে অঙ্গীকারনামা গ্রহণ করবে যে, চূড়ান্ত যাচাইয়ে (সংশ্নিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা) বাদ পড়লে বা বিরূপ মন্তব্য পাওয়া গেলে ফলাফল মেনে নিতে বাধ্য থাকবেন।' প্রতিবেদনে চারজন মুক্তিযোদ্ধার সনদ উপজেলায় যাচাইয়ের পর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তারা হলেন- পাবনার সুজানগরের গাবগাছী গ্রামের আমিন উদ্দিন মণ্ডল, রাজশাহীর গোদাগড়ীর উজানপাড়া গ্রামের মো. আব্দুস সালাম, কুমিল্লার দেবিদ্বারের শুভপুর গ্রামের নিখিল চন্দ্র দাশ ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর বরাশুর গ্রামের এসএম একরামুল হক। এ ছাড়া জামুকার শুনানিতে অনুপস্থিত ৫ জনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ জমা প্রদান করলে তা যাচাই-বাছাইয়ের পর সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
প্রতিবেদনে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়ে বলা হয়, 'অতীতে যাচাই-বাছাই ব্যতীত গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমানে জামুকায় যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় রয়েছে। তাই উপজেলার মাধ্যমে সমস্ত যাচাই-বাছাই ব্যতীত গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ ও গেজেট যাচাই করে জামুকার সভায় চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে যা আগামী এপ্রিলের মধ্যে সমাপ্ত হবে।'
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, 'বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের প্রতি আমরা আন্তরিক। সে জন্য শর্তসাপেক্ষে তাদের নিয়োগের বিষয়ে আমরা সুপারিশ করেছি। চূড়ান্ত বাছাইয়ে সংশ্নিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার ফলাফল নেতিবাচক হলে তার পোষ্যের নিয়োগও বাতিল হবে। এটাই আমরা বলে দিয়েছে।'
সূত্র জানায়, গত ৩০ এপ্রিল ৩৯তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চার হাজার ৭৯২ জন প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় পিএসসি। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০ নভেম্বর চার হাজার ৪৪৩ জন এবং ৮ ডিসেম্বর ১৬৮ জনসহ মোট চার হাজার ৬১১ জনকে নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু এর মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন কারণে ঝুলে যায় ১৮১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম। যার মধ্যে ১১৫ জনই মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থী। তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করতে গত ১ অক্টোবর জামুকার সদস্য মো. মোতাহার হোসেন এমপিকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের উপকমিটি গঠন করা হয়। অপর দুই সদস্য হলেন শহীদুজ্জামান সরকার এমপি ও মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীরপ্রতীক। উপকমিটি ২২ অক্টোবর ও ২৪ নভেম্বর পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের মুক্তিযোদ্ধা বা প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। পরে তাদের বিষয়ে জামুকার ৬৬তম সভায় প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে সব প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেক মুক্তিযোদ্ধার যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির প্রতিবেদনে তিন শ্রেণির সুপারিশ পাওয়া গেছে। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বাধীন জামুকার ৬৬তম সভায় সংশ্নিষ্টদের বিষয়ে ফের শুনানি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ ও ৮ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী সংশ্নিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা বা তার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শুনানি গ্রহণ করেন।