৪ দেশে হাজার কোটি টাকা পাচার সেলিমের!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অনলাইন ক্যাসিনো কারবারের হোতা সেলিম প্রধান নানা অপকর্মের মাধ্যমে আয় করা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। তদন্তকারীরা বলছেন, এরই মধ্যে চারটি দেশে তাঁর হাজার কোটি টাকা সরানোর তথ্য পাওয়া গেছে। কোন পথে, কীভাবে এ অর্থ পাচার করা হয়েছে সেই তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তাঁরা। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন এস এম আজাদ।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সেলিম প্রধান তাঁর অবৈধ আয়ের বিপুল পরিমাণ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাজ্যে পাচার করেছেন। আরো কীভাবে অর্থ পাচার করেছেন, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তাঁরা আরো জানান, সেলিম প্রধানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন বাংলাদেশের রোমান, সীমান্ত রনি, শান্ত ও আক্তারুজ্জামান। সীমান্ত রনি ও শান্তকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। সেলিমের ক্যাসিনো কারবারের গুরু উত্তর কোরিয়ার নাগরিক মি. দো ওরফে তু ছিলেন এ কারবারের অর্ধেক অংশীদার। আয়ের টাকা নিজ দেশে সরিয়েছেন তিনিও। এ ছাড়া লি ও লিম নামের আরো দুই উত্তর কোরীয় নাগরিক সেলিমের অবৈধ কারবারের সহযোগী। তাঁরা কোথায় আছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তদন্তকারীরা।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর থাই এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজ থেকে সেলিম প্রধানকে নামিয়ে আনে র‌্যাব। এরপর তাঁর গুলশান ও বনানীর বাসা এবং অফিসে অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সমপরিমাণ ২৩টি দেশের মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ১৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক, ৪৮ বোতল বিদেশি মদ, একটি বড় সার্ভার, চারটি ল্যাপটপ ও দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। হরিণের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইনে তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পরে মাদকের মামলায় সেলিম ও তাঁর দুই সহযোগীকে দুই দফায় হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। গত রোববার মানি লন্ডারিং মামলায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত সেলিম, আক্তারুজ্জামান ও রোমানের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘গ্রেফতারের আগে-পরে সামগ্রিক তদন্ত করে মামলা দেয়া হয়। আজ (গতকাল) আমরা মাদক মামলার তদন্তভার পেয়েছি। এ মামলায় তদন্ত করে আমরা কানেকশন খতিয়ে দেখব।’ তিনি জানান, গুলশানের ফু-ওয়াং ক্লাবে অভিযানের ঘটনায় দায়েরকৃত মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার তদন্তভারও গতকাল র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সেলিম প্রধানকে গ্রেফতারের পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে মাসে কোটি কোটি টাকা আয় করতেন সেলিম প্রধান। আয়ের বড় একটি অংশ তিনি বিদেশে পাচার করতেন। এর মধ্যে তাঁর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।

সেলিম প্রধান জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস ও পেপারস লিমিটেডসহ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক। তাঁর প্রেসে বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ছাপানো হতো। এর বাইরে অবৈধ অনলাইন ক্যাসিনো কারবার ছাড়াও তিনি সীমান্তে গরুর বিট খাটাল ও সোনা চোরাচালানের কারবারেও জড়িত ছিলেন। তাঁর অবৈধ কারবারের ঢাল ছিল ‘মিডিয়া ব্যবসা’।

তদন্ত সূত্র জানায়, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর কোরীয় নাগরিক দো-র সহায়তায় শুরু করা সেলিম প্রধানের অনলাইন জুয়ার মূল সার্ভার ফিলিপাইনের ম্যানিলায়। তিনি সেখান থেকে অনলাইন জুয়ার কপিরাইট কিনে ঢাকায় সার্ভার চালু করেন। নব্বইয়ের দশকে জাপানে গিয়ে বিয়ে করেন সেলিম। সেখানে গাড়ির ব্যবসা করতে গিয়ে প্রতারণার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। একপর্যায়ে জাপান থেকে ফিরে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানেও বিয়ে করেন সেলিম। পরে থাইল্যান্ডে বসতি গড়ে তোলেন। সেখানে হোটেল ও ক্যাসিনো ব্যবসা রয়েছে তাঁর। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে গিয়াসউদ্দিন মামুনকে বিএমডাব্লিউ গাড়ি উপহার দিয়ে হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ হন সেলিম। সরকার পরিবর্তিত হলে রংমহলের ফাঁদে ফেলে অনেকের সঙ্গে সখ্য গড়েন। তবে ‘লন্ডন কানেকশন’ অব্যাহত রাখেন সেলিম।

সূত্র মতে, থাই এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজ থেকে সেলিমকে নামিয়ে আনার সময় তাঁর লাগেজ তল্লাশি করে পাওয়া যায় তিনটি মেমোরি কার্ড। সেখানে দেশি-বিদেশি তরুণীদের সঙ্গে অনেক ব্যক্তির অন্তরঙ্গ ছবি ছিল। এসব ছবি দেখিয়ে কোটি টাকা বা সুবিধা ভাগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সেলিমের। গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ৯৯ নম্বর সড়কের ১১/১ মমতাজ ভিশন নামের বাড়ির দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়েছিলেন সেলিম। ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে (বাঙালি) নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। চতুর্থ তলায় ছিল তাঁর রংমহল। সেখানে তিনটি কক্ষ নাচ-গান ও বিশেষ ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনে ব্যবহার করা হতো। একটি বিশেষ কক্ষে ভেন্টিলেটরের ওপর ছোট্ট গোপন ক্যামেরা বসানো ছিল। সেলিমের সহযোগী মাসুম ওই গোপন ক্যামেরায় ছবি ধারণ করতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম র‌্যাবকে বলেছেন, “ছবি ধারণের পর সেলিম প্রধান প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ‘প্রধান ক্লাবের’ সদস্য করে নিতেন। এরপর নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন।” বনানীতে সেলিমের স্পা সেন্টারের পাশের কক্ষে প্রমোদকেন্দ্র খুলেছিলেন তিনি। এরই মধ্যে সেলিমের গাড়িচালক সুলাইমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। তিনি বলেছেন, গুলশানের বাসার চারতলার অফিসে একটি গোপন কক্ষ রয়েছে। সেখানে গত ছয় মাসে অন্তত ১০০ তরুণীকে গাড়িতে করে নিয়ে গেছেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057909488677979