চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের ৬ মাস অতিক্রম হলেও এখনো ৩৬তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্তদের গেজেট হয়নি। কবে নাগাদ গেজেট প্রকাশিত হবে তার সঠিক উত্তর নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা দ্রুত গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্তদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। সহসাই ৩৬তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য গেজেট প্রকাশ করা হবে।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর ৩৬তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরপর উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য গত ৯ নভেম্বর পিএসসি সুপারিশ পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এতে দুই হাজার ৩২৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। পর্যাপ্ত ক্যাডার পদ না থাকায় তিন হাজার ৩০৮ জনকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগে সুপারিশের জন্য উত্তীর্ণের তালিকায় রাখা হয়। বিভিন্ন ক্যাডারে ২ হাজার ১৮০ জনকে নিয়োগ দিতে ২০১৫ সালের ৩১ মে ৩৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি।
নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, পিএসসি বর্তমানে দ্রুত সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে প্রতিটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি থেকে নিয়োগ পর্যন্ত ৩ থেকে চার বছর লেগে যাচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিবেদন দিতে দুই মাসের বেশি কোনোভাবেই লাগার কথা নয়। অথচ ৬ মাসেও তা হচ্ছে না। তারা বলছেন, চাকরি পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু নিয়োগ পেতে দেরি হওয়ায় আমরা এখন হতাশ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, মূলত পুলিশের যাচাই প্রতিবেদন ও অন্যান্য প্রক্রিয়াতেই সময় লাগছে বেশি। ফলে ফল প্রকাশের দীর্ঘ সময়েও চাকরিতে যোগদান করতে পারেন না সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা। অকারণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে মেধাবী তরুণদের বেকার থাকা কষ্টদায়ক। কেননা শুধু পুলিশ যাচাইয়ের কারণে প্রথম শ্রেণির ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ করতে না পারা দুঃখজনক।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩৬তম বিসিএসের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা ও জেলা প্রশাসনকে। এজন্য গত ২১ ডিসেম্বর প্রাক চাকরি বৃত্তান্ত যাচাই ফরম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এসবিতে পাঠানো হয়। আর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয় গত ১০ জানুয়ারি। সংস্থাগুলো প্রার্থীদের তথ্য পাওয়ার পর তদন্ত কার্যক্রমও প্রায় শেষ করেছে। অথচ তদন্তের জন্য প্রার্থীদের প্রাক চাকরির বৃত্তান্ত যাচাই ফরম জনপ্রশাসন থেকে পাঠানোর সময় একমাসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করার কথা বলা হলেও তা মানছে না সংস্থাগুলো।
রাজনৈতিক পরিচয়কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে বলা হয়। এছাড়াও প্রার্থীদের প্রাক চাকরি বৃত্তান্ত যাচাই ফরমের সঙ্গে জনপ্রশাসনের নিজস্ব আরো একটি ফরম রয়েছে। এতে প্রার্থী রাষ্ট্রবিরোধী বা রাজনৈতিক কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত কিনা তার বিবরণ এবং প্রার্থীর পিতা-মাতা ও পরিবারের কোনো সদস্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন কিনা তার বিবরণ লিখতে হয়। এসব তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে একটু বিলম্ব হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আরো বলেন, প্রার্থীদের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রতিবেদন দেয় বিভিন্ন সংস্থা। তার ভিত্তিতেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, তারা চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়ে দিয়েছেন। এরপর আর তাদের কিছু করার থাকে না। বিভিন্ন ধরনের যাচাই-বাছাই শেষে গেজেট প্রকাশ করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আগামী মাসে ৩৭তম বিসিএসের ফল
আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসির। গত মাসে এই ফলাফল দেওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে বিলম্ব হয়। পিএসসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যমান কোটা বহাল রেখে ৩৭তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। আগামী মাসেই ফল দেওয়া হবে।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক