৬ রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত ১২ চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মাত্র ছয় রোগীর চিকিৎসা দিতে একসঙ্গে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১২ চিকিৎসক। অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে রাজধানীর সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে এমন বিপর্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্নিষ্ট চিকিৎসকরা। তারা বলেন, তাদের জন্য নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও জীবণুনাশক ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি সবাইকে একসঙ্গে গাড়িতে যাতায়াত ও খাবারের জন্য এক ডাইনিং টেবিল ব্যবহার করতে হয়েছে। এ কারণে তাদের সুরক্ষা হয়নি। ফলে একসঙ্গে এত বেশি চিকিৎসক করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।

জানা যায়, এই হাসপাতালে গত ১৩ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন ২২ জন চিকিৎসক। ওই সময় মাত্র ছয় রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে ১২ চিকিৎসক আক্রান্ত হন। এর পরের সপ্তাহে একইভাবে ২৬ চিকিৎসক দায়িত্বে ছিলেন। এর মধ্যেও ৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসক ছাড়াও এ সময়ে হাসপাতালটিতে ১৩ নার্স ও এক স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।

চিকিৎসকরা অভিযোগ করেন, করোনা আক্রান্ত এই চিকিৎসকদের শাহবাগের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির ডরমেটরি ও ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশনের ডরমেটরিতে আলাদা রুমে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু আলাদা রুম দেওয়া হলেও একই বাথরুম ব্যবহার করতে হয়েছে তাদের। রুম থেকে একই লিফট ব্যবহার করে ডাইনিংয়ে একসঙ্গে সবাইকে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকটা নোংরা পরিবেশের মধ্যে তাদের থাকতে হয়েছে। নিয়মিত রুম পরিস্কার করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। তাছাড়া ডরমেটরি থেকে একটি গাড়িতে সবাইকে হাসপাতালে আনা-নেওয়া করা হয়। হাসপাতালের মধ্যেও সুরক্ষার ব্যবস্থা যথাযথ করা হয়নি। হাসপাতালের অনেক রুমে জীবাণুনাশক ব্যবহারের জন্য পাওয়া যায়নি। সরকারি অর্থ ব্যয় দেখানো হলেও বাস্তবে মানসম্মত সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়নি। এসব অব্যবস্থাপনার কারণে চিকিৎসকরা বেশি করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।

জানা যায়, সরকারি এই হাসপাতালে সব সরকারি কর্মচারীকে চিকিৎসা নেওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। হাসপাতালের চিকিৎসকদের এই বেহাল অবস্থার কারণে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মচারী এ হাসপাতালে চিকিৎসা না নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সাধারণ কর্মচারীরাই বেশিরভাগ এখান থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে হাসপাতালের দুরবস্থার কারণে তারাও বাধ্য হয়ে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। এই হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিয়েছেন দু-একজন উপসচিব ও যুগ্ম সচিব। কোনো অতিরিক্ত সচিব বা সচিব পদমর্যাদার কেউ এখান থেকে চিকিৎসা নেননি। অথচ সরকারি কর্মচারীদের জন্য এই হাসপাতালটি নির্দিষ্ট করা হয়।

গত ৬ জুন থেকে এখানে করোনা চিকিৎসা শুরু হলেও সব ব্যবস্থা না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বাস্তবিকভাবে ১৩ জুন থেকে এই হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ভর্তি শুরু হয়। ১৪ জুন রোগী ছিলেন মাত্র তিনজন। আর প্রথম সপ্তাহে ছয় রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে একসঙ্গে ৬০ রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। গত মাস পর্যন্ত ৩৬ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

এত কম সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে অস্বাভাবিকভাবে চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও অব্যবস্থাপনা ও নানা বিষয়ে অসঙ্গতি উঠে এসেছে। কমিটি করোনা সংক্রমণ থেকে সুরাক্ষার জন্য আরও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সঠিকভাবে সুরক্ষা সমাগ্রী ব্যবহারে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, 'গত মাসে করোনা চিকিৎসা দেওয়ার শুরুতে অনেক বেশি চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। এখন তা অনেক কমে এসেছে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সুরাক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারে আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে সংক্রমণ রোধের জন্য জীবণুনাশক ব্যবস্থায় ত্রুটি ছিল। শুরুতে এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়নি। এটি এখন ঠিক করা হয়েছে। এর ফলে আক্রান্তের হার কমেছে।'


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055420398712158