ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ছিল শুধুই কল্পনা। কারো ভাগ্যে জোটেনি লেখাপড়ার সুযোগ। অনেকেই মিথ্যে পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে পড়ালেখা করলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি চাকরি।
দীর্ঘ ৬৮ বছর অবরুদ্ধ জীবন-যাপনে দাসিয়ারছড়াবাসী জ্বলে-পুড়ে মরেছে। যেখানে দশ পেরোলেই বিয়ের পীড়িতে বসতে হতো ছেলে-মেয়েদের। কিশোর-যুবকরা ডুবে থাকত মরণ নেশায়। গত দুই বছর যাবত্ এখানকার ছেলে-মেয়েরা নির্দ্বিধায় স্কুলে যাচ্ছে। স্বাধীনভাবে আনন্দে চলাফেরা করছে। এভাবে প্রতিদিন বই-খাতা হাতে নিয়ে স্কুলে যেতে এখন সবার ভালো লাগছে। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে এ প্রথম দাসিয়ারছড়ার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক পর্যায়ে সারা দেশের ন্যায় নিজ ভূমিতেই পড়ার সুযোগ পেলেন।
সোমবার দুপুর ১২টায় বই উত্সব কর্মসূচি আয়োজন করেন উপজেলা প্রশাসন। কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নতুন বছরের প্রথম দিনেই দীর্ঘ ৭০ বছর পর দাসিয়ারছড়ার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার অধিকারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার, সদর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ, ছিটমহল আন্দোলন নেতা আলতাফ আলী, নূর আলম মাস্টার প্রমুখ। দীর্ঘ ৭০ বছর পর নাতনির হাতে নতুন বই দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেন আজগার আলী (৮০)।
দাসিয়ারছড়ায় ১ কোটি ৫১ লাখ ২৭ হাজার ৫২৩ টাকা ব্যয় তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এই তিনটি স্কুলে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৩৬ জন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দাসিয়ারছড়ার ৫টি মাধ্যমিকে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বারের মতোই ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত ৬৫৫ জন, ১টি দাখিল মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণী ১১০ জন, ইবতেদায়ী ১ম থেকে ৫ম ১৬৫ জন শিক্ষর্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করা হয়েছে।
অপর দিকে উপজেলার ১৮৬টি সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার ২০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে নতুন বই বিতরণ করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকসহ ২০৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীর মাঝে বই বিতরণ করা হয়। মাধ্যমিকে এমপিওভুক্ত ৩১টি ও নন এমপিওভুক্ত ৩টিসহ ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির ১২ হাজার ১৩৫ জন, এমপিওভুক্ত ১৪টি দাখিল মাদ্রাসা ও ২টি নন এমপিও দাখিল মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণীর ২ হাজার ৫৬৫ জন ইবতেদায়ী ১ম থেকে ৫ম ২২৭৫ জন, ৮টি কারিগরি (ভোকেশনাল) বিভিন্ন ট্রেডে ৫০০ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে।