৭০০ স্কুলে শিশুদের মধ্যে দুধ বিতরণের উদ্যোগ

আরিফুর রহমান |

নির্বাচিত ৭০০ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে দুধ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ৬১ জেলা থেকে নির্বাচিত একেকটি স্কুলের জন্য বরাদ্দ থাকছে ২৯ লাখ টাকা করে। ঝরে পড়ার হার কমানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুষ্টিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১৬০ দিন দেওয়া হবে ২০০ মিলিলিটার দুধের ব্যাগ।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীরা এ সুবিধা পাবে। এ জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে চার হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ডেইরি খাতের এক লাখ উদ্যোক্তা এবং পোল্ট্রি শিল্পের ৪০ হাজার উদ্যোক্তাকে সহযোগিতা করবে সরকার। এতে খরচ হবে এক হাজার কোটি টাকার মতো। তবে উদ্যোক্তাদের সরাসরি টাকা দেওয়া হবে না। অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া হবে। নির্বাচিত উদ্যোক্তা তিন থেকে সাত লাখ টাকা বরাদ্দ পেতে পারেন। দেশে প্রথমবারের মতো প্রাণিসম্পদ বীমাও চালু হতে যাচ্ছে এই প্রকল্পের আওতায়। একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও সাধারণ বীমা করপোরেশনও এ বীমার ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পেলে বীমা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তবে প্রতি ২০০ এমএল দুধের ব্যাগের যে খরচ ধরা হয়েছে; তা বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। কমিশনের দেওয়া তথ্য মতে, এ প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৫০ জন কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। বিদেশ প্রশিক্ষণের জন্য ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, প্রতি ২০০ এমএল দুধের ব্যাগের দাম ধরা হয়েছে ৩২ টাকা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এমন প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। তাদের মতে, বর্তমানে ২০০ এমএল দুধের ব্যাগের বাজার মূল্য ২২ টাকা। সে হিসাবে ১০ টাকা বেশি দাম ধরা হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, ‘এটি আমাদের প্রাক্কলন। দরপত্র আহ্বানের পর যে কম্পানি কাজটি পাবে, তখন বোঝা যাবে, প্রতি ২০০ এমএল দুধের ব্যাগের দাম কত হবে। শেষ পর্যন্ত ৩২ টাকা নাও থাকতে পারে।’

চার হাজার ৭৯৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে চার হাজার ৪২ কোটি টাকা। বাকি ৭৫৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যাবে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হওয়ার আগেই প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাবে বলে আশা করছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অনুমোদন পেলে এটি হবে এ অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, পুষ্টিহীনতা ও দুধের প্রাপ্যতা বেশি এমন এলাকায় স্কুল বাছাই করা হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় স্কুল নির্বাচন করা হবে বলে আশঙ্কা পরিকল্পনা কমিশনের। একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্কুলের নাম দেবে সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্য। ফলে একজন সংসদ সদস্য তাঁর নিজস্ব পছন্দ মোতাবেক স্কুলের নাম দেবেন। এমন হলে সত্যিকারের অপুষ্টি ও গরিব শিক্ষার্থীদের বাদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।

এর আগে দেশে প্রথম স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিস্কুট বিতরণ শুরু হয় ২০০১ সালে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে এখন ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী দুপুরে স্কুলে পুষ্টিকর বিস্কুট পাচ্ছে। বিস্কুট দেওয়া হচ্ছে এমন এলাকায় ঝরে পড়ার হার মাত্র ৬ শতাংশ বলেও এক জরিপে উঠে এসেছে। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি স্কুলে দুপুরের খাবারও দেওয়া শুরু হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, থাইল্যান্ড সরকারি অর্থায়নে প্রথম কয়েক বছর স্কুলে দুধ বিতরণ করা হয়। পরে সরকার আইন করে, স্কুল কর্তৃপক্ষকেই এই দুধ সরবরাহ করতে হবে। মহাপরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি এই উদ্যোগ জনপ্রিয়তা পায়, তাহলে আমরাও আইন করতে পারব।’

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে এখন প্রায় চার কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। এমন বাস্তবতায় প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুধ খাওয়ার একটা অভ্যাস তৈরি হবে, দুধের পুষ্টি সম্পর্কেও জানতে পারবে। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের অপুষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ দুধের অভাব। যুক্তরাজ্যে জনপ্রতি বছরে দুধ পান করার পরিমাণ ২৪২, সুইডেনে ৩৫৬, যুক্তরাষ্ট্রে ২৫৪, অস্ট্রেলিয়ায় ২৪১ ও জার্মানিতে ২৪৭ কেজি। তবে বাংলাদেশে মাত্র ২৬ কেজি।

 

 

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061378479003906