বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ের কলাকৌশল শেখাতে যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ শিগগিরই আসছে বাংলাদেশে। তারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি কর্মশালায় বসবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে তারা এরই মধ্যে আলোচনা শেষ করেছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।
ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, গত মাসে টাইমস হায়ার এডুকেশনের পক্ষ থেকে ইউজিসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সিঙ্গাপুর অফিস থেকে প্রতিষ্ঠানটির সাউথ এশিয়ার রিজিওনাল ডিরেক্টর রিটিন মালহোত্রা যোগাযোগ করেন ইউজিসির ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন ও কোলাবরেশন (আইসিসি) বিভাগের সঙ্গে।
টাইমস হায়ার এডুকেশন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে একটি কর্মশালা করতে চায়। এ জন্য ইউজিসি কী ধরনের সহায়তা দিতে পারবে তা জানতে চান রিটিন মালহোত্রা। ইউজিসি শুধু ভেন্যু দিয়ে সহায়তা করতে চায়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্বও নেয় ইউজিসি। তাতেই রাজি হয় তারা।
ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘টাইমস হায়ার এডুকেশনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে একটি কর্মশালা করতে চায়। আমরাও সম্মত হয়েছি। শিগগিরই কর্মশালার তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।’
ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, ইউজিসিতে পাঠানো টাইমস হায়ার এডুকেশনের এক ই-মেইল বার্তায় আগামী ৩১ জুলাই সেমিনারের সম্ভাব্য তারিখ জানানো হয়েছে। তাতে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং-দ্য ডাটা মাস্টারক্লাস, সমাজে ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংয়ের প্রভাবসহ নানা অধিবেশন রাখা হয়েছে। তবে ইউজিসির পক্ষ থেকে এখনো কর্মশালার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়নি।
সূত্র মতে, বাংলাদেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ১০ বছর পার করেছে, তাদের এই সেমিনারে রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। দেশে ৪৯টি পাবলিক ও ১০৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে।
টাইমস হায়ার এডুকেশন গত মে মাস থেকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বেশি পরিচিতি লাভ করে। তারা এবার এশিয়ার সেরা ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করলেও সেখানে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েরই নাম ছিল না। অথচ এই তালিকায় পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ঠাঁই পায়। এমনকি নেপালের ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি এবং শ্রীলঙ্কার ইউনিভার্সিটি অব কলম্বোও রয়েছে।
টাইমস হায়ার এডুকেশনের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না থাকায় দেশে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট দুর্বল থাকায় যথাযথ তথ্য তারা সংগ্রহ করতে পারছে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ, পাবলিকেশন, শিক্ষার্থীসংখ্যা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাতসহ ১৩টি দিক বিবেচনা করে র্যাংকিং করে থাকে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্দিষ্ট ফি জমা না দেওয়ায় তারা টাইমস হায়ার এডুকেশনের তালিকায় স্থান পায়নি। তাদের দাবি, এশিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১২৭তম এবং বিশ্বে ৮০১তম।
ইউজিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রিটিন মালহোত্রা জানান, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে বড় দুর্বলতা আছে। বাংলাদেশের কোনো অধ্যাপকের পিএইচডিসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য থাকে না। ফলে তাঁর পিএইচডি কোন মাপের সে বিষয়ে জানা যায় না। অথচ বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে একজন শিক্ষক কোথায় পিএইচডি করেছেন সে তথ্যসহ বিস্তারিত বিষয় উল্লেখ থাকে। কাউকে তথ্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেতে হয় না। অথচ বাংলাদেশে তা সম্ভব নয়।
শিক্ষাবিদরা জানান, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় ঘাটতি হলো টিচিং অ্যান্ড লার্নিং। এই দুটি পদ্ধতি খুব পুরনো আমলের রয়ে গেছে। এ ছাড়া গবেষণায়ও আরো অনেক দূর যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানের দিক দিয়ে এগোতে পারছে না।