গাজীপুরের কাপাসিয়া কলেজ‘দুর্নীতিবাজ’ অধ্যক্ষ

শাহীন আকন্দ |

মো. ছানাউল্লাহ। কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে কলেজের অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। দিনকে দিন আরো বেসামাল হয়ে উঠছেন তিনি। মো. ছানাউল্লাহ নিজেও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে তাঁর নিয়োগে অনিয়ম ধরা পড়েছে। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ আদালত ওই চিঠির কার্যকারিতা কয়েক দফা স্থগিত করে। এ সুযোগে অনিয়ম আর দুর্নীতিতে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মো. ছানাউল্লাহ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি উপাধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষ হন তিনি। অধ্যক্ষ নিয়োগকালে ছানাউল্লাহসহ পাঁচজন প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নেন চারজন। তাদের মধ্যে তিনজনের চাকরির অভিজ্ঞতা কম থাকায় পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ওই পদে নিয়োগ পান মো. ছানাউল্লাহ।

এদিকে দীর্ঘদিন কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা। ওই সময় সভাপতির প্রত্যক্ষ মদদে একের পর এক অনিয়ম করতে থাকেন অধ্যক্ষ। ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর ‘কাপাসিয়া কলেজ অনিয়মে হাবুডুবু’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে দেয়। একই সঙ্গে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। পরে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ছানাউল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ওই চিঠির কার্যকারিতাকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন অধ্যক্ষ। ফলে উচ্চ আদালত ওই চিঠির কার্যকারিতা কয়েক দফা স্থগিত করেন।

জানা গেছে, কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা নিজের জমি দেখিয়ে তা বিক্রি করে ক্রেতাকে একই দাগে থাকা কলেজের জমি দিয়ে দখল বুঝিয়ে দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠন করা তদন্ত কমিটি ওই জমি উদ্ধারের জন্য তাগিদ দিলেও অধ্যক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।

কয়েকজন শিক্ষক জানান, অ্যাডহক কমিটির প্রথম সভায় সরকারি সংস্থার মাধ্যমে গত পাঁচ বছরের আয়-ব্যয়ের অডিটের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গত দুই বছরেও তা কার্যকর হয়নি। পাঁচ বছর আগে অডিটে কোটি টাকার তথ্য গোপন ও অনিয়ম ধরা পড়ে। পরবর্তী পাঁচ বছরে আরো কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা।

২০১৫ সালের ২৭ জুন ব্যবস্থাপনা ও সমাজকর্ম বিষয়ের অনার্স কোর্স চালুর সময় আল আমিন নামের একজনকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ পেলেও তিনি যোগদান করেননি। তিন বছর তাঁর কোনো খোঁজ ছিল না। শিক্ষক হাজিরা খাতা ও নতুন শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো তালিকায়ও তাঁর নাম নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে ২০১৬ সালের ১৫ মে খলিলুর রহমান আরিফ আইসিটি বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে খণ্ডকালীন নিয়োগ পান। তিনি স্নাতকে তৃতীয় শ্রেণিপ্রাপ্ত।

তবে অধ্যক্ষ মো. ছানাউল্লাহ সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘কলেজের সাবেক শিক্ষক আমজাদ হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের সাজানো অভিযোগ করেন। আমার নিয়োগ প্রক্রিয়া বৈধভাবে হয়েছে। নিয়োগবোর্ড মনোনয়ন দেওয়ার পর আমি উপাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছি।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027720928192139